জাহিবা হোসাইন, মোংলা: সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্রে আরো ১৯টি কুমিরের বাচ্চা মারা গেছে। রোববার দুপুরে মৃত কুমিরছানার খণ্ডিত দেহাবশেষ উদ্ধার করে বন বিভাগ। এসব কুমিরছানা কোনো মাংসাশী প্রাণীর আক্রমণে মারা পড়েছে বলে দাবি করেছে বন বিভাগ।
এ নিয়ে ৫ দিনের ব্যবধানে প্রজননকেন্দ্র থেকে ৫২টি কুমিরের বাচ্চা খোয়া গেল। এগুলোর মধ্যে অন্তত ৩৪টি কুমিরছানা সম্পর্কে কোনো তথ্যই দিতে পারেনি বন বিভাগ। পুলিশের ধারণা বন বিভাগের কর্মীরা এগুলো চুরি বা পাচার করেছে। বন বিভাগ কুমিরছানা নিখোঁজের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে বন বিভাগের ভেতরে ব্যাপক তোলপাড় চলছে।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি করমজল কুমির প্রজননকেন্দ্র হতে দুই দফায় ৪৩টি কুমিরের বাচ্চা খোয়া যায়। এর দুদিন পর ওই এলাকা থেকে ৯টি কুমিরের বাচ্চার খণ্ডিত দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয় বলে দাবি করে বন বিভাগ। কুমিরছানা নিখোঁজের ওই ঘটনার পর রোববার আরো ১৯টির খণ্ডিত মৃতদেহ উদ্ধারের কথা জানায় বন বিভাগ।
বন বিভাগের দাবি, শনিবার গভীর রাতে হিংস্র প্রাণীর আক্রমণে এগুলো মারা যেতে পারে। তবে আগে নিখোঁজ হওয়া ৪৩টি কুমিরের বাচ্চার কোনো হদিস মেলেনি এখন পর্যন্ত। বন বিভাগ তখন জানিয়েছিল, এসব কুমিরছানাকে কেন্দ্রের দুই কর্মচারী পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে।
কুমিরছানা উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় বন বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটির রোববারের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কুমিরছানা ‘হত্যার’ ঘটনায় কেন্দ্রের এক কর্মচারীকে বরখাস্ত ও আরেক কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে বন বিভাগ। আগের তদন্ত কমিটি এসব কর্মচারীকে কোনোরকম জিজ্ঞাসাবাদ করেনি।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ খুলনার বন সংরক্ষক মো. জাহিদুল কবির জানান, কুমির প্যানে থাকা বাচ্চাগুলো রুটিনমাফিক দেখভালের সময় একটি প্যানে ১৬টি ও আরেকটি প্যানে ৩টি কুমির মৃত দেখা যায়। এগুলো প্যানের (কৃত্রিম পুকুর) পাশের দিকে বিছিন্নভাবে ছড়ানো-ছিটানো ছিল। মৃত কুমিরের বাচ্চাগুলোর ঘাড়ে কামড় ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হিংস্র বন্যপ্রাণী আক্রমণ চালিয়ে এ বাচ্চাগুলো হত্যা করতে পারে বলে তার ধারণা।
এদিকে কুমির প্রজননকেন্দ্রে বন বিভাগের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অন্য প্যানে থাকা ২১৫টি কুমির বাচ্চা নিরাপদ একটি প্যানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। রাতেই ওই প্যান এলাকায় ২০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হবে বলে জানায় বন বিভাগ।
খুলনার দাকোপ থানায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওমর ফারুক পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানান, দুপুরে ডিএফও সাইদুল ইসলাম তাকে করমজল থেকে ফোন করে জানিয়েছেন আরো ১৯টি কুমিরের বাচ্চা বন্যপ্রাণী খেয়ে ফেলেছে। এগুলোর ছিন্নভিন্ন শরীর করমজলে পড়ে আছে। তৃতীয় দফায় ১৯টি কুমির মারা পড়ার ঘটনায় রোববার বিকেলে করমজল পর্যটন কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. তৌহিদুর রহমান দাকোপ থানায় আরকটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে বেশ কয়েকবার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম ও সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মেহেদীজ্জামানকে ফোন করলেও তাদেরকে ফোনে পাওয়া যায়নি।