বিড়াল মেরে কুমির হত্যার বদলা নিল বন বিভাগ

জাহিবা হোসাইন, মোংলা (বাগেরহাট): সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্র হতে ৪৩টি কুমিরের বাচ্চা উধাও হয়ে যাওয়া এবং ১৯টি বাচ্চা মারা পড়া নিয়ে রহস্যের কোনো কূলকিনারা হয়নি। প্রথম দুই দফায় ৪৩টি বাচ্চা চুরি করে অন্যত্র পাচারের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাতে বন বিভাগ একের পর এক নাটকীয় কৌশল নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বন বিভাগের দাবি, প্রথম দুই দফায় ৪৩ কুমিরের বাচ্চা চুরি কিংবা পাচার হলেও তৃতীয় দফায় ১৯টি কুমির বাচ্চা হিংস্র চিতাবিড়ালের আক্রমণে মারা গেছে।

রোববার রাতে কুমিরের প্যানের (কৃত্রিম পুকুর) ভেতরে একটি চিতাবিড়াল দেখতে পেয়ে সেটাকে গুলি করে মারা হয় বলে জানায় বন বিভাগ।

বন বিভাগের দাবি রোববার রাতে প্রজননকেন্দ্রে যে ১৯টি কুমিরের বাচ্চা মারা গেছে সেগুলো এই প্রাণীভোজী চিতাবিড়াল মেরে ফেলেছে। সেজন্য ওই চিতাবিড়ালটিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। চিতাবিড়ালটির ময়নাতদন্তের জন্য খুলনায় পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পূর্ব সুন্দরবনের চাদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মেহেদীজজামান।

এর আগে প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় ৪৩ কুমিরের বাচ্চা নিখোঁজের বিষয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তা একেক সময় একেক রকম তথ্য দেন। প্রথমবার তিনি জানান, কুমিরছানাগুলো একটি চক্র চুরি করে অন্যত্র পাচার করে দিয়েছে। যদি কোনো প্রাণীতে এগুলো মেরে ফেলত কিংবা খেত তাহলে সেখানে রক্ত, হাড়, মাংসসহ বিভিন্ন আলামত থাকত। সেগুলো কোন কিছুই সেখানে পাওয়া যায়নি। এ বক্তব্য থেকে সরে এসে পরে তিনি বলেন, বাচ্চাগুলো কেন্দ্রের কর্মচারী জাকির ও মাহবুব হত্যা করেছে। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমানের সাথে ওই দুই কর্মচারীর সম্পর্ক ভালো ছিল না। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ফাঁসানো বা বেকায়দায় ফেলতে তারা পরিকল্পিতভাবে বাচ্চাগুলো হত্যা করেছে। সোমবার তিনি কুমিরছানার ‘হত্যাকারী’ হিসেবে চিতাবিড়ালকে দায়ী করেন। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় বাচ্চাগুলো জাকির ও মাহবুব হত্যা করেছে বলে তিনি তার তদন্তে নিশ্চিত হয়েছেন বলে দাবি করেন।

কুমিরের বাচ্চা নিখোঁজ ও মারা যাওয়ার মো. মেহেদীজজামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বন বিভাগ। রোববার এ কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। তবে ‘অধিকতর সুক্ষ্ম’ তদন্তের জন্য কমিটি আরো এক সপ্তাহ সময় বাড়িয়ে নিয়েছে বলে জানান মেহদীজজামান।

চিতাবাঘের মতো দেখতে দুই থেকে আড়াই ফুট লম্বা বনবিড়ালটি কীভাবে এতগুলো কুমিরকে আক্রমণ করে মেরে ফেলতে পারে এ নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

কুমির প্রজননকেন্দ্রে বন বিভাগের নজরদারি আগের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে। কুমির বাচ্চা সংরক্ষণের জন্য কৃত্রিম পুকুরগুলোর চারপাশে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। এছাড়া জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে পুকুরের বাইরের অংশ।

গত ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি কুমির প্রজননকেন্দ্রের দুটি প্যান থেকে ৪৩টি কুমিরছানা উধাও হয়ে যায়। এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯টি কুমির বাচ্চা রহস্যজনকভাবে মারা যায়।

এসব ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন পড়তে নিচের শিরোনামে ক্লিক করুন:

চুরি না হত্যা? করমজলের ৪৩ কুমিরছানা অন্তর্ধান নিয়ে বিরাট রহস্

করমজল রহস্য: ৪৩ কুমিরছানা নিখোঁজের জট না খুলতেই মারা পড়ল আরো ১৯টি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.