বিএসআরআই’র উদ্যোগে ঈশ্বরদীর চরাঞ্চলে ধু-ধু বালিতে আখ চাষ করে সাফল্য

স্বপন কুমার কুন্ডু, ঈশ্বরদী (পাবনা): চরাঞ্চলের বালিতে আখ চাষের সাফল্য তুলে ধরলেন ঈশ্বরদীতে অবস্থিত বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএসআরআই) কর্মকর্তাবৃন্দ। বুধবার সকালে ইনস্টিউটের ট্রেনিং সেন্টারে সাংবাদিকদের কাছে ‘চরাঞ্চলে আখ চাষের মাধ্যমে দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্পের অর্জন এবং ভবিষ্যত কর্মপন্থা চি‎িহ্ন‎তকরণ’ শীর্ষক কর্মশালায় এই সাফল্য এবং দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির বর্ণনা তুলে ধরেন মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক ডঃ সমজিৎ কুমার পাল। সেমিনারের উদ্বোধন করেন, ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ডঃ খলিলুর রহমান। এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিচালক ডঃ আমজাদ হোসেন।

Suceess Sugarcane cultivation in Issorde
ইশ্বরদীর চরাঞ্চলের বালিতে আখ চাষের সাফল্য তুলে ধরলেন বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএসআরআই) কর্মকর্তাবৃন্দ।

সেমিনারের প্রবন্ধে বলা হয়, বৃহত্তর রংপুরের চরাঞ্চলের ধু-ধু বালিময় পতিত জমিকে আখ চাষের মাধ্যমে আবাদি জমিতে রূপান্তরিত করার জন্য আখের জাত বাছাই এবং লাগসই উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও তার সফল বিস্তার করা সম্ভব হয়েছে। আর এ কারণে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটকে ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২০’ প্রদান করা হয়েছে। বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের ৫টি জেলার ১৬টি উপজেলার চরাঞ্চলে বিস্তৃত ছিল এ কাজ। বালিময় পতিত এসব চরে বিঘা প্রতি ১০০০-১২০০ টাকার ‘ধইঞ্চা’ কিংবা ‘কাশ’ হতো। অন্য কোন ফসল হতোনা। এখন সেই চরে চাষিরা পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত আখ বিক্রি করছেন। ফলে প্রাথমিকভাবে লাভ পেয়েছেন জমির মালিকগণ। আর আখ আবাদের ফলে দ্বিতীয় সুবিধাভোগী হয়েছেন চরাঞ্চলের বেকার শ্রমিক। এখন সারা বছর তাদের কর্মসংস্থান হয়েছে।

আগাম পরিপক্ক ইক্ষুজাতসমূহ চাষাবাদের ফলে ফাঁকা জায়গা পূরণ, মাটি আলগা করে দেয়া, আগাছা পরিষ্কার, সার উপরি প্রয়োগ, ইক্ষু বাঁধাই, গোড়ায় মাটি দেয়া, ইক্ষু কাটা, পরিবহন, গুড় তৈরি, বিক্রয় ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া আমন ধান রোপণের পর এবং কাটার আগে অর্থাৎ আশ্বিন-কার্তিক মাসেই আখ রোপণ করা হয়। আবার পরের বছর ওই সময়েই আখ কাটা ও গুড় তৈরি করা হয়।

অপরদিকে আরো দুটি শ্রেণি কাজের সুযোগ পেয়ে লাভ করেছেন। এরা হলেন গুড় উৎপাদনকারী এবং গুড় ব্যবসায়ী। গুড় ছাড়াও আকর্ষণীয় জাতের চিবিয়ে খাওয়া আখের উৎপাদন এবং বিপণন এখন আরো এক বড় ব্যবসায়ে পরিণত হয়েছে। এই কাজের উদ্দেশ্য ছিল ওই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানউন্নয়ন। চর এলাকায় এখন অতিরিক্ত শ্রমিকের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে শ্রমিকদের মজুরি ৭০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ২৫০ টাকা হয়েছে।

বালিময় পতিত যে চরে শুধু ‘ধইঞ্চা’ কিংবা ‘কাশ’ হতো, অন্য কোন ফসল হতোনা এখন সেই চরে দৃষ্টিনন্দন আখের সমাহার ঘটেছে। এতে আবাদি জমি বৃদ্ধির সাথে সাথে সামগ্রিক ফসল উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন অনেক নারীই আখ ক্ষেতে কাজ করে ভাল রোজগার করছেন।

বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট বর্তমানে সুগারবিট, তাল, খেজুর, গোলপাতা, স্টিভিয়া প্রভৃতি মিষ্টি উৎপাদনকারী ফসলের ওপর গবেষণা পরিচালনা করে আসছে। বিএসআরআই তার সীমিত জনবল ও সম্পদ নিয়েই দেশের চিনি ও গুড় উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

এই প্রতিষ্ঠান এখন আখের পাশাপাশি ট্রপিক্যাল সুগারবিটের ৮টি জাত প্রবর্তন করেছে। সারাদেশের জন্য এর চাষাবাদ প্রযুক্তি প্যাকেজ উদ্ভাবন করেছে। সুগারবিট থেকে স্থানীয়ভাবে গুড় তৈরির কৌশল উদ্ভাবন করেছে। তাছাড়া পারিবারিকভাবে ব্যবহারের জন্য সুগারবিটের লাড়ু, মোয়া প্রভৃতি তৈরির কৌশল উদ্ভাবন করেছে।

এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ইক্ষুচাষ সম্প্রসারণ কার্যক্রমে ওই এলাকার মানুষ আখ চাষের অর্থনৈতিক সুবিধা বুঝতে পেরে নিজেরাই চিবিয়ে খাওয়া আখ এবং গুড় উৎপাদন উপযোগী আখ চাষাবাদ করছেন বলে জানা গেছে। এতে ঐ এলাকায় আখ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য ঐ এলাকায় এবছরও ২৫টি গবেষণা কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। সেমিনারে জাতীয় পত্রিকার সকল প্রতিনিধি, স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদকসহ মোট ৩০ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.