মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী): একইস্থানে চাকুরি করছেন প্রায় দেড় যুগ। মাঝে দু’একবার বদলির আদেশ হলেও অদৃশ্য ক্ষমতাবলে সেই বদলি তিনি ঠেকিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এ কারণেই পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক মো. নেছার উদ্দিন এখন সাধারণ শিক্ষকদের কাছে আতঙ্কের নাম।
মো. নেছার উদ্দিনকে ঘুষ-দুর্নীতির যোগানে বাধ্য করা হচ্ছে শিক্ষকদের। বিশেষ করে শিক্ষক নিয়োগ পরবর্তী বেতন-ভাতা অন-লাইন অগ্রায়নের সময় তাকে মোটা অংকের ঘুষ দিতে হয়। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল কাজে যেমন টিএফ ফান্ড, উপ-বৃত্তির অর্থ ছাড় করানো, প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণে নাম অন্তর্ভুক্ত করাসহ সকল কাজে ফাইল আটকে আর্থিক সুবিধা দিতে বাধ্য করা হয়। এ সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন সময় শিক্ষকরা দিয়েছেন। এ বিষয়ে একাধিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু কোন প্রতিকার পায়নি ভুক্তভোগী শিক্ষকরা। কোন উপায় না পেয়ে ১ ফেব্রুয়ারি কলাপাড়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানি চলাকালে নেছার উদ্দিনকে অভিযুক্ত করে লালুয়া এসকেজেবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. জুনায়েত হোসেন একটি লিখিত অভিযোগ উত্থাপন করেন। বিষয়টি নিয়ে এখন চলছে তোলপাড়।
শিক্ষক মো. জুনায়েত জানান, নিয়োগ পরবর্তী তার বেতনভাতার কাগজপত্র অন-লাইনে অগ্রায়ন করতে তিন কিস্তিতে নেছার উদ্দিনকে ৪৬ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। কোন তারিখে কীভাবে কত টাকা দিয়েছেন তাও জুনায়েত উল্লেখ করেছেন। টিএফ ফান্ডের চেক নেয়ার সময় প্রত্যেকবারে দুই হাজার টাকা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। উপ-বৃত্তির অর্থ বিতরণকালে প্রতিবারে এক-দেড় হাজার টাকা দিতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন প্রশিক্ষণে শিক্ষকদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে অর্থ আদায় করে নেছার উদ্দিন। এ কর্মচারীর অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে ২০০৯ সালে ৩৮ জন শিক্ষক যৌথ স্বাক্ষরে নেছার উদ্দিনের বিরুদ্ধে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
জুনায়েত আরও জানান, ১৯৯৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকে নেছার উদ্দিন কলাপাড়ায় কর্মরত রয়েছেন। সাধারণ শিক্ষকদের জিম্মি দশায় ফেলে স্থানীয় কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের ম্যানেজ করে শিক্ষা অফিসের আশ্রয়-প্রশয়ে এমনসব অপকর্ম করে যাচ্ছেন তিনি। নেছার উদ্দিনকে অন্যত্র দ্রুত বদলি করে অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেন শিক্ষক জুনায়েত।
এ বিষয়ে মো.নেছার উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি শিক্ষক জুনায়েত হোসেনের সঙ্গে ২০০৯ সালের পর থেকে কথাও বলেন না।
কলাপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী রুহুল আমিন জানান, বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত না করে কিছুই মন্তব্য করা যাবে না।