বাসা বাড়ি, কলখারখানা ও পরিবহনে ব্যবহার্য্য গ্যাসের দাম ১ মার্চ ২০১৭ থেকে বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদনের খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের জাতীয় প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান কনুজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এ প্রস্তাবের মার্চের অংশ বাস্তবায়ন করা হলেও জুনের অংশটি বাতিল, সর্বত্র গ্যাসের প্রাপ্যতা নিশ্চিত, সেবার মান নিশ্চিত, এলপিজির সহজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, বাসাবাড়িতে গ্যাসের অপচয় রোধে প্রিপেইড মিটার স্থাপন, জাতীয় গ্রীড থেকে গ্যাস বিতরণে সমতা আনয়ন, গ্যাস খাতে অনিয়ম ও সিস্টেম লস কমাতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তারা গ্যাসের দাম বৃদ্ধিকে ভোক্তাদের প্রতি চরম অবিচার বলে উল্লেখ করেন।
গ্যাসের দাম দু’ধাপে ৪৯.০২ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রতিদিন নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল ভোগ্যপণ্যের দাম হু হু করে বেড়ে যেখানে সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকা নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়েছে, সেখানে ১৬ কোটি সাধারণ জনগণের স্বার্থ চিন্তা না করে জ্বালানী গ্যাসের দাম দু’দফায় ৪৯.০২ শতাংশ বৃদ্ধি সাধারণ ভোক্তাদের চলমান জীবনযাত্রায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। গৃহস্থলির ব্যবহার্য গ্যাস ও রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস সিএনজি গ্যাসের মূল্যবদ্ধি মধ্যবিত্তসহ সাধারণ নাগরিকদের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, গণপরিবহন ও শিল্প করকারখানয় উৎপাদন খরচ বাড়বে, যার খেসারত দিতে হবে ১৬ কোটি ভোক্তাকে।
তারা আরও বলেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে গণপরিবহণে ভাড়া বৃদ্ধির কারনে হু হু করে সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বাজারে আগুন ধরে যাবে। সকল গ্যাস কোম্পানিগুলো যখন লাভজনক অবস্থানে আছে, তখন এ দাম বৃদ্ধির প্রয়োজন ছিল না দাবি করে তারা বলেন, এ দামবৃদ্ধি ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিযুক্ত নয়। দেশের নিম্ন মধ্যবিত্তসহ সাধারণ জনগণের উপর বর্ধিত মূল্য চাপিয়ে দেয়ার ঘটনাকে গণবিরোধী ও সরকারের উপর জনরোষ সৃষ্টির পাঁয়তারা কিনা তা খতিয়ে দেখার দাবি করেন তারা।
এছাড়াও গণশুণাণীতে ভোক্তাদের পক্ষ থেকে প্রদত্ত সুপারিশের মধ্যে একটি সুপারিশও কার্যকর না করে গণশুণাণীকে হাস্যকর করা, ভোক্তাদের স্বার্থ চিন্তা না করে সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুত উৎপাদনকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করায় নবগঠিত বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেশন কমিশনকে ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে তাদের মূলদায়িত্ব থেকে সরে এসেছে বলে মতপ্রকাশ করেছেন কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও মহানগর কমিটি।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, আর্ন্তজাতিক জ্বালানী তেলের দাম সর্বনিম্ন হলেও দেশের বাজারে বারংবার দাম সমন্বয় করার প্রস্তাব নিয়ে বিইআরসি কোন প্রকার প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে, ভর্তুকি হ্রাস, গ্যাস উন্নয়ন তহবিল ইত্যাদি অজুহাতে এই দামবৃদ্ধির ঘোষণা মধ্যবিত্তসহ সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা নিত্য প্রয়োজনীয় সকল প্রকার সকল দ্রব্যসমাগ্রী ও সেবা সার্ভিসের আরেক দফা দাম বাড়াবে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরী কমিশন গ্যাস কোম্পানিগুলোর আবেদনের প্রেক্ষিতে ভোক্তাদের স্বার্থ চিন্তা না করে ভর্তুকি হ্রাস, সিস্টেম লস, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ’র পরামর্শে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে হঠকারী ও দুঃখজনক বলে মন্তব্য করে এ প্রক্রিয়াকে হতাশাজনক ও বিইআরসির প্রতি সংবিধানের প্রদত্ত দায়িত্বের বরখেলাপ বলে অবিলম্বে এ ধরনের হটকারী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য নেতৃবৃন্দ সরকার প্রধানের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে আরও বলেন, বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি বাজাওে যে আগুন ছড়াচ্ছে তা মধ্যবিত্ত জনগণসহ সর্বস্তরের সাধারণ নাগরিকের জীবনযাত্রাকে ভয়াবহ দুর্বিসহ করে তুলেছে, বর্তমান গ্যাসের দাম বৃদ্ধি তার গায়ে গতি সঞ্চার করবে। গৃহস্থলির গ্যাস ও রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস সিএনজির মূল্য বৃদ্ধির কারণে খাদ্য উৎপাদন, কৃষি, শিল্প, পরিবহন, ব্যবসা বাণিজ্য ইত্যাদি খাতে প্রভাব ফেলবে।
বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেন তারা হলেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসসিন সুলতানা পারু, দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান প্রমুখ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।