বাগেরহাট প্রতিনিধি: প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন খুলনা-মোংলা রেলপথের জমি অধিগ্রহণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মাঠ পর্যায়ে কিছু ব্যক্তির অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে প্রকৃত জমির মালিকগণ তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আবার যোগসাজশে অনৈতিক পথে কেউ কেউ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। রামপাল ও মোংলা উপজেলার কয়েকটি এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনকালে সাংবাদিকের উপস্থিতির খবরে ছুটে আসেন এলাকার শতাধিক মানুষ। এ সময় তারা সার্ভেয়ার রিয়াজ উদ্দিনসহ তার সহযোগীদের অনিয়ম-দুর্নীতির নানা অভিযোগ তুলে ধরেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নির্মাণাধীন খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের কিছু অংশের দায়িত্বে নিয়োজিত সার্ভেয়ার রিয়াজ উদ্দিন স্থানীয় একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ কাজে মোস্তাক, জাহাঙ্গীর, সাঈদ, শেখরসহ ১০/১২ জনের দালাল চক্রকে কাজে লাগানো হচ্ছে।
এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, রেলপথ নির্মাণে অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য নির্ধারণে গণর্পূত বিভাগকে কাজে লাগানো হলেও সংশ্লি¬ষ্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী পাকা ও কাঁচা ঘরের জন্য আলাদা মূল্য নির্ধারণ করা হলেও সে নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হয়নি। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় অধিগ্রহণ করা জমির উপর থাকা নানা প্রজাতির গাছের সংখ্যা দ্বিগুণ দেখিয়ে টাকা উত্তোলনের পর ভাগ-বাটোয়ারা করা হচ্ছে।
বাস্তাবায়নাধীন রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সংযোগ সড়ক সংলগ্ন সোনাতুনিয়া, ধলদা, ঝনঝনিয়া, টেংরাখালী, বেলাই, হুড়কা, বাছাড়েরহুলা ও দ্বিগরাজ এলাকার বাসিন্দারা এসব অভিযোগ করেন।
তারা জানান, রামপালের, হুড়কা মৌজায় জনৈক দিপংকর মন্ডলের নামে ছয় লাখ টাকা উত্তোলন করা হলেও, তার নিজস্ব কোন সম্পত্তি বা বসত ঘর নেই। বড় নবাবপুর মৌজায় অজয় মন্ডলের বসত ঘরটি অন্যের নামে দেখিয়ে প্রাপ্ত অর্থ আত্মসাত করেছে ওই চক্রটি। ঝালবাড়িয়া মৌজায় ছয় নং ওয়ার্ডে একই ঘর দুই ব্যক্তির নামে বরদ্দ দেখানো হয়েছে। এরা হলেন আঞ্জিরা বেগম ও হারুন অর রশিদ। একই মৌজায় জনৈক লোকমান আলীর নামে বসত বাড়ির ছয় লাখ টাকা বরাদ্দ নিয়ে আত্মসাত করেছে ওই চক্রটি।
সন্তোষপুর মৌজায় সাখাওয়াত উল্লাহর কাঁচা ঘর পাকা ইমারত দেখিয়ে ২৮ লাখ টাকা উত্তোলনের পর ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছেন সার্ভেয়ার রিয়াজ উদ্দিনসহ দালাল চক্রটি। কদমজি মৌজায় সৈয়দ আলী মিয়ার বাগানে ১৮ হাজার গাছ দেখিয়ে ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা বরাদ্দ ঘটনায় আপত্তি জানানো হলে সংশোধন করে ৪ হাজার ৩’শ টি গাছের অনুকুলে ৩৮ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। টেংরামারী মৌজায় রেজাউল করিমের নিজস্ব কোন বসত ঘর নেই। তার নামে বসত ঘর দেখিয়ে বরাদ্দকৃত টাকা সমান ভাগে ভাগ করে নেয় চক্রটি।
হুড়কা মৌজায় আশিষ মন্ডলের নামে জমি দেখানো হলেও তার কোন জমি নেই। ঝনঝনিয়া মৌজায় মাসুদ শেখের নামে বসত ঘর দেখানো হলেও বাস্তবে কোন ঘর নেই। বাস্তবায়নাধীন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংযোগ সড়কে ১০৯ ফুট চওড়া এবং ৪.৫ কিঃমি লম্বা জমির ওপর ৪০ টি ঘর থাকলেও চক্রটি ৩২২ টি ঘর দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। ভূমি মালিকরা জানান, অধিগ্রহণ করা জমির টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে প্রতিটি চেক এর অনুকূলে ৭ থেকে ১০ শতাংশ হারে টাকা দিতে হচ্ছে রিয়াজ সাহেবকে। দাবিকৃত টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে অধিগ্রহণে থাকা ঘর বাড়ির মূল্য পরিশোধ করাতো দূরের কথা, তালিকাভুক্তই হয়নি অনেক ঘর বাড়ি বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
এ ব্যাপারে রামপাল এলাকার একজন জনপ্রতিনিধি ক্ষোভের সাথে বলেন, সার্ভেয়ার রিয়াজ সাহেব তার দালাল চক্র নিয়ে অনিয়মে লিপ্ত হয়েছেন। ২০০৯ সালে বাগেরহাটে যোগদানের পর অদ্যাবধি একইস্থানে বহাল তবিয়তে আছেন রিয়াজ উদ্দিন। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের হস্থক্ষেপ কামনা করেন।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সার্ভেয়ার রিয়াজ উদ্দিন, তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্য, বানোয়াট বলে দাবি করেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক উন্নয়নের লক্ষ্য তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ইতিমধ্যে প্রকল্পের মাটি ভরাট এবং ভূমি অধিগ্রহণের ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। মোংলা থেকে খুলনা রেল লইনের এ প্রকল্পের দূরত্ব ৬৫.৭৫ কিঃমিঃ। আর মোংলা বন্দর থেকে খুলনার ফুলতলা পর্যন্ত এ রেল লাইনে ৮টি ষ্টেশন নির্মাণ করা হবে। ২৭৫ একর জমি নিয়ে ২০১৫ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের কাজ আগামী বছর ডিসেম্বরে শেষ হবে।