বাগেরহাট প্রতিনিধি: ঢাকা ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী নববধূ শরীফা আক্তার পুতুল হত্যা মামলায় ফাঁসির আসামি শিকদার মাহমুদুল আলম (৩৫) আজও গ্রেফতার না হওয়ায় তার স্বজন ও সহপাঠিরা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন। নিহতের বাবা আবু দাউদ অবিলম্বে খুনী মাহমুদুল আলমকে গ্রেফতার করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন। পুতুলকে নৃশংসভাবে হত্যার পর তার সহপাঠিরা ও বাগেরহাটের বিভিন্ন সংগঠন ঘাতক স্বামী মাহমুদুল আলমের বিচারের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করে।
২০১৩ সালের ১০ মে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের মাত্র তিন দিনের মধ্যে পরকীয়া সন্দেহে পুতুলকে তার স্বামী মাহমুদুল জবাই করে হত্যা করে। নিহত শরীফা আক্তার পুতুল বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের উদয়পুর দৈবকান্দি গ্রামের আবু দাউদের মেয়ে এবং ঢাকা ইডেন কলেজের ইতিহাস বিভাগের সম্মান তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। তার স্বামী মাহমুদুল আলম একই গ্রামের শিকদার সামছুল আলমের ছেলে। পুতুল হত্যার ঘটনায় তার পিতা মামলা দায়ের করেন। মামলায় জামিনে ছাড়া পেয়ে মাহমুদুল পলাতক হয়। এ মামলায় ২০১৬ সালের ১২ মে বাগেরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. মিজানুর রহমান খান স্বামী মাহমুদুল আলমের ফাঁসির রায় ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌশুলী শেখ মোহম্মদ আলী মামলার বরাত দিয়ে জানান, শরীফার বড় বোন সাগরিকা মাহমুদুলের বড় ভাই শাইকুলের স্ত্রী। আত্মীয়তার সূত্রধরে ইডেন কলেজের ছাত্রী শরীফা আক্তারের সাথে মাহমুদুলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা গোপনে বিয়ে করে। পরে ঘটনা জানাজানি হলে উভয় পরিবার তাদের সম্পর্ক মেনে নিয়ে ২০১৩ সালের ১০ মে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিয়ে দেন। বিয়ের তিনদিন পর ১৩ মে রাত দুইটার দিকে মাহমুদুল ঘরে ঘুমাতে এসে তার নববিবাহিতা স্ত্রী শরীফার মুঠোফোনে একটি ক্ষুদেবার্তা দেখে ক্ষুব্দ হন। অন্য কারো সঙ্গে পরকীয়া প্রেম রয়েছে এই অজুহাতে ক্ষিপ্ত হয়ে মাহমুদুল শরীফাকে দা দিয়ে জবাই করে হত্যা করে। হত্যার পর রাতেই মাহমুদুল কীটনাশক পান করে মোল্লাহাট থানায় গিয়ে তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করে। পরে পুলিশ তার বাড়িতে গিয়ে তালাবদ্ধ ঘরের ভেতর থেকে শরীফার জবাই করা লাশ ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো চাপাতি উদ্ধার করে।
ঘটনার পরদিন ১৪ মে নিহত শরীফার বাবা মো. আবু দাউদ বাদী হয়ে মোল্লাহাট থানায় জামাতা মাহমুদুল আলমের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মোল্লাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ.ন.ম খায়রুল আনাম তদন্ত শেষে ওই বছরের ১০ নভেম্বর মাহমুদুল আলমের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আদালতের বিচারক ১৪ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ঘাতক মাহমুদুল আলমকে ফাঁসির রায় দেন।
কিন্তু আজও দণ্ডপ্রাপ্ত মাহমুদুলকে পুলিশ আটক করতে পারেনি। ফলে পুতুলের সহপাঠি ও স্বজনেরা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন। নিহতের পিতা আবু দাউদ অবিলম্বে খুনী মাহমুদুল আলমকে গেফতার করে তার মৃত্যুদণ্ড দ্রুত কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে দাবি জানিয়েছেন।