বর্জ্য ও দূষণে অস্তিত্ব সংকটে সাতক্ষীরার প্রাণ প্রাণসায়ের খাল

আমিনা বিলকিস ময়না, সাতক্ষীরা: দখল ও ময়লা আবর্জনার স্তুপে শহরের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া এক সময়ের প্রমত্তা প্রাণসায়েরের খাল এখন শহরবাসীর দুঃখে পরিণত হয়েছে। খালের দু’পাশ দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতি গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া মাছ বাজারের বর্জ্য, কচুরিপানা, খালের ধারে পৌরসভার ময়লার স্থান করাসহ নানা কারণে খালটি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

Satkhira Pran Sayer river
বর্জ্য দূষণে অস্তিত্ব সংকটে সাতক্ষীরার প্রাণ প্রাণসায়ের খাল।

অন্যদিকে দুই মুখে অপরিকল্পিত স্লুইচ গেট নির্মাণের কারণে পানি প্রবাহিত না হওয়ায় খালটি বড় ডোবায় পরিণত হয়েছে। ফলে খালের পঁচা দুর্গন্ধে ভারি হয়ে উঠছে শহরের বাতাস, রোগ জীবানু ছড়াচ্ছে, জন্মাচ্ছে মশা। পৌর মেয়রের বাড়ি থেকে মাত্র ১০ গজ দূরে খালে ময়লা ফেলানো হলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। তবে প্রাণসায়েরে প্রতি সপ্তাহে পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছে পৌরবাসী।

১৮৬৫ সালে সাতক্ষীরার জমিদার প্রাণনাথ রায় কলকাতার সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধার্থে প্রাণসায়ের খাল খনন করেন। খেজুরডাঙ্গী থেকে সাতক্ষীরা শহর হয়ে এল¬ারচর পর্যন্ত এ খালের দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলোমিটার। প্রথমাবস্থায় এ খালের চওড়া ছিল ২০০ ফুটের বেশি। তখন বড় বড় ব্যবসায়িক নৌকা, স্টিমার, লঞ্চ ঢুকত এ খালে। ফলে সাতক্ষীরা ক্রমশ সমৃদ্ধশালী শহরে পরিণত হয়।

১৯৮৪ সালে মহকুমা শহর থেকে জেলা শহরে রূপান্তরিত হয়। ১৯৯০ সালের প্রথম দিকে স্থানীয় জনগণের মতামতকে প্রাধান্য না দিয়ে বন্যা প্রতিহত করার নামে পানি উন্নয়ন বোর্ড খালের দু’ধারে অপরিকল্পিতভাবে স্লুইজ গেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। খালের দুই প্রান্তে পানি উন্নয়ন বোর্ড ¯¬ুইজ গেট নির্মাণ করে খালের স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটা বন্ধ করে দেয়ার কারণে বর্তমানে খালটি বদ্ধ খালে পরিণত হয়েছে। খালের পাশ দিয়ে পথচারীরা যেতে পারে না। সরেজমিনে খালের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, খালের দুপাশে গড়ে উঠেছে অবৈধ বসতি। অনেকে দ’ুধার দখল করে নির্মাণ করেছে দোকান।
বড়বাজারে ব্রিজের দুই পাশে মাছ ও মাংসের সকল বর্জ্যে খালে ফেলা হচ্ছে। গরু ও ছাগল জবাই করার পরে সকল বর্জ্য, মুরগির বর্জ্য, মাছের বর্জ্য ফেলার একমাত্র স্থান হলো প্রাণ সায়েরের খাল। ফলে অন্যদিকে পৌর মেয়রের বাড়ি থেকে মাত্র পাশে খালের উপর নির্মিত বাঁশের ব্রিজের পাশেও বিভিন্ন বর্র্জ্য ফেলা হচ্ছে।

এ সব বর্জ্য ফেলায় খালের পানি পীত কয়লায় পরিণত হয়েছে। শহরের খালের পাশ দিয়ে দুর্গন্ধের কারণে হেঁটে যাওয়া যায় না। ফলে সকালে সুস্বাস্থ্যের জন্য হাঁটা মানুষকে দুর্গন্ধ নিয়ে প্রতিদিন হাঁটতে হচ্ছে। শহরের পলাশপোল এলাকার আব্দুল আলিম জানান, খালটি শহরের সৌন্দর্য্য বর্ধনের প্রতীক হওয়ার কথা। খাল শহরের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ হলেও বর্তমানে আবদ্ধ করে রাখায় এটি আমাদের শহরের পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। তিনি আরো বলেন, খালে বর্জ্য ফেলা বন্ধ না করলে পরিবেশ রক্ষা পাবে না। শহরের প্রাণ সায়ের এলাকার বাসিন্দা আব্দুল করিম জানান, খালটিতে পৌরসভার উচিত বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা। তিনি আরো জানান, প্রত্যেক সপ্তাহে খালে স্লুইচ গেট দিয়ে পানি প্রবেশ ও বাহির হতে দিতে হবে। তবেই খাল দুর্গন্ধমুক্ত হবে। তিনি এ বিষয়ে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.