প্রতিনিধি: দিনের প্রথমভাগে শিশুদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে রাখা হলে বাংলাদেশে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার ৭০ শতাংশ রোধ করা সম্ভব।
সম্প্রতি এক গবেষণা প্রতিবেদনে এরকম তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশে প্রতিবছর ১-৪ বছর বয়সী ১২ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এই হিসাব অনুযায়ী পানিতে ডুবে গড়ে প্রতিদিন ৩২ জন শিশু মারা যায়।
দিনের প্রথমভাগে শিশুযত্ন কেন্দ্রে নিবিড় তত্ত্বাবধানে রাখার ব্যবস্থা করা গেলে ৮ হাজারের বেশি শিশুর জীবন রক্ষা সম্ভব বলে দাবি করা হয় গবেষণাটিতে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী পানিতে ডুবে মৃত্যু সারা বিশ্বে আঘাতজনিত কারণে শিশুমৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ । প্রতিবছর তিন লাখ ৫৯ হাজার ৪০০ জন ব্যক্তি পানিতে ডুবে মারা যান। এদের ২০ শতাংশের বয়স পাঁচ বছরের কম। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হারে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম। বাংলাদেশে ১ থেকে ৪ বছর বয়সী শিশুদের মোট মৃত্যুর ৪৩ শতাংশের জন্য দায়ী পানিতে ডুবে যাওয়া। এছাড়া পানিতে ডোবার কারণে আরো ১৩ হাজার শিশু স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করে। এক লাখ শিশু পানিতে ডোবার কারণে বিভিন্নভাবে আহত হয়।
শিশুমৃত্যুর এ ব্যাপকতার মূল কারণ হলো শিশুর পরিচর্যাকারীর সার্বক্ষণিক নজরদারির অভাব, বাড়ির আশেপাশে অরক্ষিত গর্ত, পুকুর, ডোবা ও অন্যান্য জলাধারের আধিক্য, সঠিক শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব এবং দারিদ্র্য।
ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিসের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়, সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) এবং আইসিডিডিআরবি বাংলাদেশের সাতটি উপজেলায় পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু নিয়ে গবেষণাটির তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। ১৫ অক্টোবর ঢাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। সিআইপিআরবি’র উপ-প্রধান পরিচালক আমিনুর রহমান গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।
গবেষণায় দুই বছর ধরে উপজেলাগুলোর প্রায় ১২ লাখ অধিবাসীর মধ্যে দুর্ঘটনাজনিত আঘাত বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে ১ লাখ ২২ হাজার ২৩ জন ১-৪ বছর বয়সী শিশুও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এতে দেখা গেছে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু ৭০ শতাংশ রোধ করা সম্ভব যদি শিশুদের দিনের প্রথমভাগে শিশুযত্ন কেন্দ্রে নিবিড় তত্ত্বাবধানে রাখা হয়।
গবেষণায় পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করে বলা হয়- গ্রামভিত্তিক শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র সফলভাবে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধে কার্যকরী। এ ধরনের দিবাযত্নের ব্যবস্থা বাংলাদেশের মতো অন্যান্য নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার দূরীকরণে বিশেষ অবদান রাখতে পারে।
এর আগে এক পরীক্ষামূলক গবেষণায় দেখা গেছে, যে সব শিশুরা ডে-কেয়ার সেন্টার কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে তাদের পানিতে ডোবার সম্ভাবনা ৮২ শতাংশ কমে যায়। ওই গবেষণায় আঁচল নামের একটি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র ও প্লে পেন নামের আরেকটি উদ্যোগের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণসহ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়।
গবেষণায় ৭০ হাজার শিশুকে প্লে পেন, আঁচল বা উভয় কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই আঁচল কেন্দ্রগুলো সপ্তাহে ছয় দিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত পরিচালিত হয়ে আসছে।
গবেষণায় দেখা যায়, আঁচল ও প্লে পেন উদ্যোগগুলো পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধে খুব কার্যকর। আঁচল ২ বছর এবং তদূর্ধ্ব শিশুদের সুরক্ষায় বেশি সফল। সাধারণত দিনের যে সময়ে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, সেই সময় শিশুরা আঁচলে সার্বক্ষণিক শিশু পরিচর্যাকারীর নজরদারিতে থাকছে। পাশাপাশি এ গ্রামভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্যও সহায়ক।
এছাড়া বয়সভিত্তিক শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের প্রভাব পর্যালোচনার বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সরকার, উন্নয়ন সহযোগী, শিশু বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের দিবাযত্নকেন্দ্র প্রসারে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সিনার্গোসের ওবায়দুল ফাত্তাহ তানভীর, এশা হোসাইন ছাড়াও জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল গাফ্ফার এম, বাছানী অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন।