ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাথে সম্পর্কের নতুন যোগ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সেই সম্পর্ক হবে কৌশলগত। এ জন্য দশ বছরের একটি ‘আইনি-বাধ্যবাধকতা’ থাকবে এমন একটি চুক্তিও করতে পারে ঢাকা। এ নিয়ে আশাবাদী ইউরোপের এই বড় জোটও।
স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের সামনে যখন বড় প্ল্যাটফর্মে টিকে থাকার নতুন চ্যালেঞ্জ, তখনই কৌশলগত এই সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা বেগ পেয়েছে।
তৃতীয় বারের মতো আয়োজিত ইইউ ইন্দো-প্যাসিফিক মিনিষ্ট্রিয়াল ফোরামের ঠিক আগে এ অঞ্চলের গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে অনলাইন বৈঠকে ইইউ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি (পিসিএ) করার বিষয়টি অনেক দূর এগিয়েছে।
তৃতীয় ইন্দো-প্যাসিফিক মিনিষ্ট্রিয়াল ফোরাম থেকে ফিরে সহযোগিতার সম্পর্ক জোরদারের ইঙ্গিত দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ফোরাম থেকে ফিরে এসে আজ সোমবার দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বিশ্বের বড় এই জোটের সঙ্গে বাংলাদেশের ডাইনামিক সম্পর্কের কথাটি উল্লেখ করেছেন। মন্ত্রী জানান, ইউরোপের অন্তত ১০ জন মন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠক ও সৌজন্য সাক্ষাত হয়েছে। তাতে বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউ-এর সম্পর্ক বিস্তৃত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইউরোপের শক্তিশালী এই জোটের সঙ্গে বহুমাত্রিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ ও বিকাশের জন্য গত বছর ২৫ অক্টোবর বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়নের মধ্যে নতুন এই অংশীদারি ও সহযোগিতা চুক্তির (পিসিএ) সূচনার কথা জানানো হয়েছিলো।
পিসিএ মূলত একটি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক চুক্তি, যা কিনা তিনটি বিশেষ ধরনের আন্তর্জাতিক চুক্তির একটি। এই চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কোন নির্দিষ্ট দেশের গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাজে সহায়তা করে।
জানা গেছে, পিসিএ সাধারণত দশ বছরের জন্য হয়ে থাকে। তবে প্রয়োজন মতো বাড়িয়ে নেওয়া যায়। সেই হিসেবে ইউরোপর সঙ্গে বাংলাদেশের এই চুক্তিটি অন্তত ১০ বছরের হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
হাছান মাহমুদ আরও জানান, ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ‘তৃতীয় ইইউ ইন্দো-প্যাসিফিক মিনিষ্ট্রিয়াল ফোরামে জোটের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি বিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি এবং ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেপ বোরেলের সঙ্গেও তার কথা হয়েছে। এই সাক্ষাতে বাংলাদেশে অবস্থান করা বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বোরেল।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্যারিসে এবং ২০২৩ সালের মে মাসে ষ্টকহোমে আগের দুটি ইন্দো-প্যাসিফিক মিনিষ্ট্রিয়িাল ফোরাম স্টকহোমে অনুষ্ঠিত হয়। এই আন্তঃদেশীয় মন্ত্রী পর্যায়ের ফোরামে ইউরোপের সঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিকের আন্তঃসংযোগ আছে এমন রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে নিয়মিত সংলাপ বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়।
এছাড়াও টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমৃদ্ধি, সবুজ রূপান্তর সমুদ্র শাসন, ডিজিটাল পদ্ধতির উন্নয়ন এবং অংশীদারিত্ব, সংযোগ, নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা ছাড়াও মানুষের নিরাপত্তার বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলটি অর্থনৈতিক এবং ভূ-রাজনৈতিকভাবে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ বলেই এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধিতে অবদান রাখতে ইন্দো-প্যাসিফিক অংশীদারদের সাথে সহযোগিতা বাড়াচ্ছে।