ভাষাকে শক্তিশালী করতে অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে হবে’

যে দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ সেই দেশের ভাষা তত শক্তিশালী। বিশ্বে নিজের ভাষাকে শক্তিশালী করতে প্রথমে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হতে হবে। নিজ ভাষায় পণ্য এবং সেবা ছড়িয়ে দিতে হবে। নিজ ভাষাকে গুরুত্ব দিয়ে এর পরিধি ও চর্চা বাড়াতে হবে। ‘

শনিবার বেলা ১১টায় সিরডাপ মিলনায়তনে সম্প্রতি বাংলাদেশের আয়োজিত ‘আমার ভাষা আমার শক্তি’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ভাষার মাসের গুরুত্ব বিবেচনায় এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

আলোচনা সভায় বক্তারা জানান, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে প্রধান নায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শুধু একুশে ফেব্রুয়ারি নয়, বহু আগে থেকেই তিনি বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম ও পরিকল্পনা করেছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, শুধু পাকিস্তান শাসনামলে নয়, বাংলা ভাষা শত শত কাল থেকে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আবার এটি হিন্দু না মুসলমানদের ভাষা তা নিয়েও ছিল বিতর্ক। মূলত বাংলা ভাষা ছিল সাধারণ মানুষের ভাষা। যা এখনো সাধারন মানুষের মাঝে বেঁচে আছে। অভিজাত শ্রেনীর লোকজন বিভিন্ন দাওয়াত কার্ড ইংরেজিতে দিয়ে থাকে নিজেদের আভিজাত্য দেখাতে। সাধারন থেকে নিজেকে আলাদা রাখতে।

ভাষার দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভাষা যোগাযোগের মাধ্যম, অন্যদিকে সংস্কৃতির বাহক। গুগলে দেখা যায় পৃথিবীর বৃহত্তম পঞ্চমতম ভাষা বাংলা। আমার জানামতে এটি ভুল। জাতিগত দিক থেকে বাংলা হল পৃথিবীর ৩য় বৃহত্তম ভাষা। যোগাযোগের বাহক হিসেবে এটি ৭ম বা ৮ম হতে পারে। আর এই বৃহত্তম ভাষার মানুষের প্রথম রাষ্ট্র গড়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। তবে এখনো আমাদের দেশে বিভিন্ন সাইনবোর্ডে ইংরেজি আধিক্য দেখা যায়। বাংলা অক্ষর গুলো খুব ছোট আকারে লেখা থাকে, যা খুব দুঃখজনক। কলকাতায় এই অবস্থা আরো ভয়াবহ। এই সংকট থেকে পরিত্রাণ পেতে দ্রুত সকল বই বাংলায় অনুবাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে একটি নীতিমালা তৈরি করতে হবে যেন বাংলার ব্যবহার বৃদ্ধি পায়।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ড. রতন সিদ্দিকি বলেন, ভাষার লড়াই খুব প্রাচীন। যুগে যুগে যারাই এসেছে তারা আমাদের ভাষা দখল করতে চেয়েছে। তারা এসেছেন, কতৃত্ত্ব করেছেন, কিন্তু ভাষা বিলুপ্ত করতে পারেন নি। লোক মেরেছে কিন্তু ভাষাকে মারতে পারে নি। এই ভাষার শক্তির কাছে কিছুই টিকে থাকে নি। দুই একটি শব্দ হয়তো তারা পাল্টে দিয়েছে।

শিক্ষাবিদ ও গবেষক ড. বিশ্বজিত ঘোষ বলেন, অর্থনীতি শক্তিশালী না হলে ভাষা কখনোই প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না। নিজ ভাষায় পন্য বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে না পারলে এটিকে সমৃদ্ধ করা যাবে না। আবার ভাষার জন্য একটি নীতিমালা প্রয়োজন। সরকার চাইলে কোথাও অন্য ভাষার সাইনবোর্ড থাকবে না। পিএসসিতে একজন চাকরি প্রার্থীকে ২০ মিনিট ইংরেজিতে ইন্টারভিউ দিতে হয়। এই সংকট থেকে পরিত্রাণ পেতে বাংলা ভাষায় দক্ষতার উপর কর্মজীবন নিশ্চিত করতে হবে।

আলোচনা সভার সভাপতিত্বকালে সম্প্রতি বাংলাদেশের আহবায়ক পীযুষ বন্দ্যোপাদ্যায় বলেন, আমাদের মাতৃভাষা আজ সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে। তারা আমাদের থেকেই শিখেছে ভাষার গুরুত্ব। অতীতের মত এখনো আমাদের ভাষা অনেক শক্তিশালী। তবে বর্তমান পুঁজিবাদ বিশ্বে এই ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের অর্থনৈতিকভাবে আরও সমৃদ্ধ হতে হবে।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সম্প্রতি বাংলাদেশের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন মহিলা পরিষদ এর নেত্রী ফরিদা ইয়াসমিন ও সাবেক সচিব নব বিক্রম কিশোর ক্রিপুরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.