পশুখাদ্যের চড়া দাম, ছোট হয়ে যাচ্ছে হাতিয়ার খামারগুলো

ছায়েদ আহমেদ, হাতিয়া (নোয়াখালী):  পশুখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারেণ বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে খামারিদের। এতে খামারগুলোতে পশুর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

হাতিয়া উপজেলার বিভিন্ন গরুর খামার ঘুরে দেখা গেছে, শুরুতে যে খামারগুলো বড় ছিল তা গোখাদ্যসহ নানান সংকটে এখন ছোট হতে শুরু করেছে। গত ৫ বছরে গোখাদ্যের দাম যে পরিমাণ বেড়েছে তা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বলে জানান খামারিরা। এতে বহু খামারি প্রতিদিন গরুর খাদ্য কমিয়ে দিচ্ছে আবার অনেকে খামার গুটিয়ে ফেলার চিন্তাও করছেন। আবার পশুখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারেণ মাংসের মূল্যও সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের ওয়াসি এগ্রো ফার্মের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল কাদের জানান, ৭০টা গরু নিয়ে তিন বছর আগে খামারটি শুরু হয়। গরুর খাবারের অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধি, সরকারি বিদ্যুতের সুযোগ না পেয়ে জেনারেটরের জ্বালানি খরচ এবং শ্রমিকের খরচ বেড়ে যাওয়ায় এখন ফার্মে গরুর সংখ্যা ২৫-এ নেমে এসেছে । তাছাড়া প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কোনো সহযোগিতাও পাচ্ছে না বলে জানান তিনি।

তমরোদ্দি ইউনিয়নের বেজুগালিয়া গ্রামের চৌধুরী ডেইরি এগ্রো ফর্মের মালিক রুবেল চৌধুরী জানান, গত ৫ বছর আগে যে খাদ্যগুলো বস্তাপ্রতি ছিল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ছিল তা এখন আড়াই থেকে তিন গুণ বেড়ে গেছে। এতে হিমসিম খেতে হচ্ছে তাদের। তিনি বলেন, লিটার প্রতি গরুর দুধ বিক্রি করি ৭০ টাকা, যা ৪ বছর আগেও একইরকম ছিল। অথচ গরুর খাদ্যের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। এ গোখাদ্যর দাম বৃদ্ধির পেছনে বড় ধরনের সিন্ডিকেট কাজ করছে বলে জানান এ উদ্যোক্তা।

এছাড়াও এ বি ডেইরি ফার্মসহ অন্যান্য খামারি ও পশুখাদ্য ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে বস্তাপ্রতি ফিড ৪০০ থেকে ৫০০ এবং গমের ভুসি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা ছিল। আর খৈল ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা, চালের খুদ ৭০০ থেকে ৮০০ ও লবণ ৩০০ টাকায় বস্তা পাওয়া যেত।

বুধবার স্থানীয় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি বস্তা ভুসির মূল্য ২ হাজার ৫০ টাকা, খৈল বস্তা প্রতি ৩ হাজার ৩০০ টাকা, জিংক ১০ লিটারের মূল্য ১ হাজার ৮০০ টাকা এবং ক্যালসিয়াম ১০ লিটারের মূল্য ১ হাজার ৭০০ টাকা। আর এভাবেই চলছে গোখাদ্যের বাজার ব্যবস্থাপনা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, এখানে ডেইরি ফার্মের সংখ্যা ২০০টির বেশি। এর মধ্যে নিবন্ধিত ১৪টি। আর ছাগলের ফার্মও রয়েছে অনেকগুলো।

হাতিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জামরুল ইসলাম জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এবারের ঈদেও চাহিদার তুলনায় আমাদের এখানে অধিকসংখ্যক গরু-ছাগল রয়েছে। বিভিন্ন কারণে গরুর দাম একটু বেশি। তিনি জানান যেকোনো ডেইরি ফার্ম  এবং কৃষকদের খেয়াল রাখতে হবে যে তাদের গবাদিপশু কৃমিমুক্ত কি না। এছাড়া কৃষক কিংবা খামারিদেরকে পল্লি চিকিৎসক সেবা না নিয়ে প্রশিক্ষণ কিংবা সরাসরি প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সাথে যোগাযোগ রেখে পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। বাজারনির্ভর খাদ্য কিংবা কৃত্রিম খাদ্যের দিকে না গিয়ে কাঁচা ঘাস উৎপাদন আর খড় খাওয়ালে পশুর জন্য বেশ নিরাপদ এবং গাভীর দুগ্ধ বৃদ্ধিতে সহায়ক বলে জানান এ কর্মকর্তা।

‘সচেতন নাগরিক সমাজ-হাতিয়া’র সাধারণ সম্পাদক মো. মহিব্বুল মাওলা জানান, গোখাদ্য বৃদ্ধির নামে প্রতিবছর ঈদুল আজহায় কুরবানির পশুর মাত্রাতিরিক্ত মূল্য হাঁকাচ্ছে ব্যবসায়ী কিংবা খামারিরা। মূল্য বৃদ্ধির এই খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদের ভোক্তামহলকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.