পার্বত্য অঞ্চলে কিছু গোষ্ঠী উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবেইবিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

পার্বত্য অঞ্চলে কিছু গোষ্ঠী উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবেইবিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে।এদেশের মানুষের মৌলিকঅধিকারগুলো আমাদের সংবিধানে বিস্তারিত বলাআছে।

বঙ্গবন্ধু এ বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা রাখতেন বলেইসংবিধানে সব ধর্ম বর্ণের মানুষের অধিকারসমানভাবে যুক্ত করেছেন। চট্টগ্রাম সেন্টার ফররিজিওনাল স্টাডিজ, বাংলাদেশের(সিসিআরএসবিডি) আয়োজনে চট্টগ্রামবিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) অনুষ্ঠিত  ‘সশস্ত্র সংঘাত ও তথ্যবিভ্রান্তির বিরুদ্ধে ছাত্র-যুবসমাজের ভূমিকা’ শীর্ষকআলোচনা সভায় এসব কথা বলেন চবি উপাচার্যঅধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের। মঙ্গলবার (১১ জুন) বেলা ২টায় চবি উপাচার্যেরসম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তন্ময়ীহাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেনউপ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক ড. মো. সেকান্দরচৌধুরী।এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চবি উপাচার্যঅধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের, বিশেষ অতিথি চবিউপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক বেনু কুমার দে।বক্তব্য দেন রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ওসিসিআরএসবিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মাহফুজপারভেজ, সিসিআরএসবিডির পরিচালক রাজকুমারসুই চিং প্রু, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদআনোয়ারুল ইসলাম এবং আইন অনুষদের ডিনঅধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক।

অধ্যাপক ড. মাহফুজ পারভেজ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামচুক্তিকে সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করতে হবে। শান্তিএকটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।এখানে শান্তি প্রতিষ্ঠাকরতে হলে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকসিদ্ধান্তের মাধ্যমে চূড়ান্ত করতে হবে। পার্বত্য এলাকারপিছিয়ে পড়া তরুণ সমাজকে আদর্শ শিক্ষায় শিক্ষিতকরতে হবে। অস্ত্রের মুখে কোনো সমস্যার সমাধানকরা সম্ভব না। পাহাড়ে যেভাবে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদচলছে, তা কারও অজানা নয়। আমাদের সচেতনভাবেসেগুলো মোকাবিলা করতে হবে।  

অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ দুই যুগ পরে পার্বত্য চট্টগ্রামের সঙ্গে যেশান্তিচুক্তি হয়েছিল, তা ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে একটিঅনন্য ঘটনা। কারণ তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই এচুক্তি হয়েছিল। পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের  জীবনযাত্রারমান উন্নত করার লক্ষ্যে সরকার অনেক উদ্যোগনিয়েছে। সেখানে স্কুল, কলেজ, মেডিক্যাল থেকে শুরুকরে বিশ্ববিদ্যালয়ও করা হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন আগথেকে কুকি-চিন নামে একটি সশস্ত্র বাহিনী সংঘাতসৃষ্টি করছে। অথচ পৃথিবীর কোথাও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকেএত সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়নি। তাই এ সংঘাতেরমাধ্যমে তারা শান্তিচুক্তির যে উদ্দেশ্য, সেটাকে ব্যাহতকরছে। উন্নয়ন প্রক্রিয়া মূলত কাউকে বাদ দিয়ে নয়, বরং সবাইকে নিয়েই বাস্তবায়ন করতে হয়। পার্বত্যঅঞ্চলের এ বহুমুখী সংঘাত যদি বন্ধ না হয়, তাহলেতাদের যে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো আরওসংকীর্ণ হয়ে আসার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশেরভূখণ্ড রক্ষায় যা যা করার, আমরা সবই করব।যুবসমাজের প্রতি আমার আহ্বান, আপনারাকোনোভাবে বিভ্রান্ত হবেন না।  

সিসিআরএসবিডির পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদআনোয়ারুল ইসলাম বলেন, দ্বন্দ্ব থেকে সংঘাত, সেখান থেকে সশস্ত্র সংঘাতে রূপ নিয়েছে কুকি-চিনেরএ বিদ্রোহ। ২০২১ সালের পরেই দেখা যাচ্ছেজো-জাতীয়তাবাদ। এটি খুব উগ্র একটি জাতীয়বাদবলেই ধারণা করা হচ্ছে। যার ফলে এ পার্বত্য অঞ্চলক্রমান্বয়ে অশান্ত হয়ে উঠছে। মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামেরপ্রাচীন ইতিহাসই আমরা স্পষ্ট করতে পারিনি। তাইআমাদের যুবসমাজ বিভ্রান্ত। এগুলো আমাদেরজানতে হবে, জানাতে হবে।

সিসিআরএসবিডির পরিচালক রাজকুমার সুই চিং প্রুবলেন, দুঃখের বিষয় এ অঞ্চলে সংঘাতের কারণেআমাদের মানুষের মাঝে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরিহয়েছে। আমাদের সংঘাতের কারণগুলো উদঘাটনকরতে হবে। তথ্য বিভ্রান্তি আমাদের এ সংঘাতেরপেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মারমা সম্প্রদায়শান্তি ও সম্প্রীতির প্রতি ঐতিহ্যগতভাবে একমত।বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে আমরা শিখতে পারি শান্তিস্থাপনে যুবসমাজ অনেক বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।তাই আপনাদের সচেতনতা এবং সহযোগিতাই কাম্য। 

চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু খুব দ্রুত পার্বত্য অঞ্চলেরসংঘাত নিরসনে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এ ছাড়া ১৯৯৭সালে প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য চট্টগ্রামের সঙ্গে শান্তিচুক্তিকরেছিলেন।ইতিমধ্যে নৃগোষ্ঠীর ভাষাগুলো সংগ্রহেরজন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এগুলো মূলত তাদেরঅগ্রাধিকার দেওয়ার জন্যই। যুবসমাজের প্রতি বিশেষঅনুরোধ, আমাদের মধ্যে বিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তুভালো করে জানতে হবে প্রকৃত ঘটনা কী? প্রয়োজনেগবেষণা করতে হবে, আলোচনায় বসতে হবে, যুক্তিতর্কের মাধ্যমে বিষয়গুলো সমাধান করতে হবে।

তিনি বলেন, স্থলভাগের চেয়ে জলভাগে সম্পদ বেশিথাকে। আমাদের সমুদ্রে যে সম্পদ আছে, সেটাআহরণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীও ব্লু ইকোনোমিরদিকে নজর দিচ্ছেন। খুব দ্রুতই কক্সবাজারআন্তর্জাতিকভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হয়ে উঠবে।মূলত সব সংঘাতের পেছনে এগুলোই কারণসাম্রাজ্যবাদ বিভিন্নভাবে আপনার ওপর আধিপত্যবিস্তার করতে চাইবে, সেগুলো আমাদের বুঝতে হবে।সরকার পার্বত্য অঞ্চলে উন্নয়নে অত্যন্ত আন্তরিক।মনে রাখবেন আমাদের দেশে দুর্নীতিও হয়, উন্নতিওহয়। এটাকে অনেক অর্থনীতিবিদ মিস্ট্রিয়াসইকোনমিও বলছে।

সভাপতির বক্তব্যে চবি উপউপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী বলেন, পার্বত্যঅঞ্চলের সঙ্গে যে শান্তিচুক্তি, সেখানের ৭৫টি দাবিরমধ্যে ৫০টির বেশি ইতিমধ্যে পূরণ করা হয়েছে। অথচআমরা দেখছি একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী সংঘাত সৃষ্টিকরছে। যার ফলে শান্তিচুক্তি ভঙ্গ হওয়ার ব্যাপকআশঙ্কা তৈরি হয়েছে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারেরআন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। সেটা একবারপার্বত্য অঞ্চল ঘুরে এলেই উপলব্ধি করা যায়।  

তিনি বলেন, অনেকের লোলুপ দৃষ্টি আছে আমাদেরএসব ভূখণ্ডের প্রতি আমাদের সেনাবাহিনী দিনরাতকাজ করছে শান্তি স্থাপনের জন্য। তাই আমাদেরওকথা বলতে হবে এসব নিয়ে। পাশাপাশি মানুষকেসচেতন করতে হবে।