মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী): সুফিয়া বেগম (৬০) ও তার মেয়ে ময়না বেগম (৩৫)। দুজনেরই মাথা, হাত, পা, পিঠ, চোখসহ শরীরজুড়ে কালচে দাগ। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতচিহ্ন, শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে, তবে সেগুলোর দাগ এখনো সুস্পষ্ট। মা-মেয়ের কারোরই শরীর সোজা করে দাঁড়ানোর শক্তি নেই।
ছাগলে আমন চারা খেয়েছে এমন অভিযোগ এনে মা আর মেয়ের ওপর নির্যাতন চালায় কলাপাড়ার চম্পাপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের লোকমান ফকির, কামাল ফকির, দেলোয়ার ফকিরসহ কয়েকজন। ১৬ সেপ্টেম্বর সকালে বাড়ির সামনে প্রকাশ্যে দুজনকে পেটানো শুরু করে দুর্বৃত্তদল। বৃদ্ধা সুফিয়া জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তবুও তার ওপর নির্যাতন থামেনি।
প্রায় এক ঘণ্টা ধরে তিন ফকির আর তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের নির্যাতন চলে মা-মেয়ের ওপর। রক্তাক্ত হয়ে পড়েন সুফিয়া ও ময়না। আহত দুজনকে নির্যাতকরা ঘরে আটকে রাখে।
অবশেষে প্রতিবেশীদের সহায়তায় মা-মেয়ে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে নির্যাতকদের কড়া পাহারা থাকায় মা-মেয়ে কারো কাছে নির্যাতনের বিচার চাইতে বা অভিযোগ জানাতে পারেননি।
ঘটনার সাতদিন পর গত মঙ্গলবার সুফিয়া বেগম লুকিয়ে কলাপাড়া প্রেসক্লাবে এসে তাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা বর্ণনা করেন। সাংবাদিকসহ উপস্থিত মানুষকে দেখান শরীরের ক্ষত। বিচার চান তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতনের।
সাংবাদিকদের সুফিয়া বেগম নির্যাতনের কারণ হিসেবে ভিন্ন তথ্য দেন। তিনি অভিযোগ করেন, নির্যাতকরা বিভিন্ন সময়ে তার মেয়ে এবং কিশোরী নাতনিকে খারাপ প্রস্তাব দিত। তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণের চেষ্টা করত। কিন্তু মেয়ে ও নাতনি তাদের এড়িয়ে চলত। এদের অত্যাচারে তার কন্যা ও নাতনির বাড়ি থেকে বেরুনোই কঠিন হয়ে পড়ে। নির্যাতকদের প্রস্তাবে সায় না দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ছাগলে ধানের চারা খাওয়ার বাহানা বানিয়ে তাদের পেটানো হয়।
শেষ পর্যন্ত নির্যাতনের ঘটনায় তারা গতকাল (বুধবার) কলাপাড়া থানায় অভিযোগ করতে পেরেছেন। কলাপাড়া থানার ওসি মো.আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, তারা অভিযোগ পেয়েছেন। তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।