ঝিনাইদহে স্কুলের কম্পিউটার শিক্ষকের বাসায়, প্রজেক্টর থাকলেও ব্লাকবোর্ডেই পাঠদান

জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ: শ্রেণিকক্ষে প্রজেক্টর থাকলেও ব্লাকবোর্ডে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক। টেবিলে সাজানো কম্পিউটারগুলো অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গেছে ব্যবহার না করার কারণে। যেগুলো ভালো আছে, সেগুলো ব্যবহার হচ্ছে শিক্ষকদের ব্যক্তিগত ও অফিসের কাগজপত্র টাইপের কাজে। কোনো কোনো স্কুলের শিক্ষক প্রভাব খাটিয়ে কম্পিউটার বাসায় নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

computar-pic1-jhenaidah
প্রজেক্টর থাকলেও ব্লাকবোর্ডেই পাঠদান চলছে।

এতে ডিজিটাল ব্যবস্থায় শিক্ষা গ্রহণ বঞ্চিত হচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা। সব মিলিয়ে ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেওয়া কম্পিউটার, ল্যাপটপ শিক্ষার্থীদের কাজে লাগছে না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তৃণমূল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কম্পিটারে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে ঝিনাইদহের ৬টি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয়েছে ল্যাব, কম্পিউটার ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর।

এসব কম্পিউটার ও ল্যাপটপ ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদানে ব্যবহার হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অফিসের কাগজপত্র টাইপের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ল্যাপটপগুলো কোনো কোনো শিক্ষক বাড়িতে নিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন। সরকারের নির্দেশ আছে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শিক্ষা দান করানোর। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারের সেই নির্দেশ মানছে না।

ঝিনাইদহ সরকারি বয়েজ স্কুলের একাধিক শিক্ষার্থী সাংবাদিকের কাছে অভিযোগ করে বলেন, আমাদের স্কুলে যে কম্পিউটার দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে বেশ কয়েকটি নষ্ট হয়ে গেছে। যেগুলো সচল আছে। সেগুলো শিক্ষকরা অধিকাংশ সময় ব্যবহার করেন। আমাদের কোনো কাজে লাগে না। কম্পিউটার না থাকার কারণে প্রতিনিয়ত সমস্যা হয়, অধিককাংশ শিক্ষার্থী ভালো মতো কম্পিউটার শিখতেও পারে না।

ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চননগর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাধিক ছাত্রী বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে যে ল্যাব ছিল তা অচল। আইসিটি ক্লাস করি শুধুমাত্র বই পড়ে। কম্পিউটার না থাকায় সেগুলো মুখস্থ করতে হচ্ছে।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের প্রজেক্টর চুরি হয়ে গেছে। যে কারণে সেখানে মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস নেওয়া বন্ধ রয়েছে। এছাড়া সদর উপজেলার হাটগোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যে ল্যাব দেওয়া হয়েছিল, তার অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে।

ওই বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক মাজেদুল ইসলাম বলেন, যে ল্যাব দেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে কয়েকটি নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েকটি সচল আছে, তা অফিসের কাজ আর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।

এদিকে ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চননগর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রদীপ কুমার বিশ্বাস বলেন, তার প্রতিষ্ঠানে যে ল্যাব দেওয়া হয়েছিল, তা ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে।

কম্পিউটারগুলো মেরামতের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। সদর উপজেলার মাওলানাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষকরা ব্লাকবোর্ডে ক্লাস নিচ্ছেন। বন্ধ রয়েছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম এবং ল্যাপটপটি রয়েছে প্রধান শিক্ষকের টেবিলে।

মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেওয়া হচ্ছে না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষক আমানত হোসেন সাংবাদিককে বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে যে কক্ষগুলো রয়েছে তা মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়ার উপযোগী না। মাঝে মধ্যে দু’একটি ক্লাস নেওয়া হয়।

ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিদর্শক মফিজুর রহমান আকাশ সাংবাদিককে বলেন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে বুঝতে পেরেছি, প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়া কম হচ্ছে। এর কারণ শিক্ষকদের অজ্ঞতা আর প্রতিষ্ঠানের ভৌত অবকাঠামো সমস্যা বলে মনে হচ্ছে।

ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোকছেদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার বিষয়ে দক্ষ করে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে জেলা শিক্ষা অফিস। কেউ যদি কম্পিউটারগুলো ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজগুলোতে সরকার থেকে ৪ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ, কম্পিটার ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর দেওয়া হয়েছে।

ঝিনাইদহ জেলার ৬টি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী রয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৪৭৭ জন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.