আমিনা বিলকিস ময়না, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় কলেজ ছাত্র গৌতম হত্যার প্রতিবাদে ও ঘাতকদের ফাঁসির দাবিতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ ও মাহমুদপুর কলেজ ছাত্রদের যৌথ আয়োজনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনকালে তা গণবিক্ষোভে রূপ নেয়। এলাকার কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়ে মানববন্ধন শেষে সড়ক অবরোধ করে পুলিশের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ এনে মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তরের দাবি জানায়।
মঙ্গলবার সকালে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত দুই ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন চলাকালে বিক্ষুব্ধ জনতা প্রেসক্লাব ও থানা সড়ক অবরোধ করেন। এরপর কয়েক হাজার মানুষের মিছিল শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক থেকে শহরের নিউমার্কেট চত্বরে এসে সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেয়। সোমবার দুপুর পর্যন্ত এই অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে তারা গৌতম সরকার হত্যাকারীদের সাথে পুলিশের সখ্যতার অভিযোগ এনে সদর থানার ওসি (তদন্ত) আলমগীর কবিরের প্রত্যাহার দাবি করেন।
একই সাথে ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্লা ও দুই এস আই আবুল কালাম ও আসাদুজ্জামানকে হত্যা মামলা নিয়ে অর্থ বাণিজ্য না করার আহবান জানান। তারা বলেন, গৌতম হত্যাকা-ের মূল নায়ক জামশেদকে সাতক্ষীরা থানা থেকে অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দিয়ে হত্যায় সহায়তা করা হয়েছে। পুলিশ এখন জামায়াত ক্যাডার জামশেদকে বাঁচানোর পাঁয়তারা করছে। এই হত্যা নিয়ে পুলিশকে কোন ধরনের লুকোচুরি না খেলার দাবি তোলেন তারা।
মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম শওকত হোসেন, ঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ফজলুর রহমান, মো. শাহাদাত হোসেন, এড. ওসমান গনি. এড. শাহনাজ পারভিন মিলি, এড. ফাহিমুল হক কিসলু, বিশ্বনাথ ঘোষ, বিশ্বজিত সাধূ, স্বপন কুমার শীল, রঘুনাথ খাঁ, গোষ্ঠবিহারী মন্ডল, মুক্তিযোদ্ধা হাসান ইমাম, মাধব দত্ত, অসীম চক্রবর্তী, মো. আবু সাঈদ, ইদ্রিস আলি, সুভাষ সরকার, আলিনুর খান বাবুল প্রমুখ। এ সময় তারা গনেশ সরকার পরিবারের নিরাপত্তা দাবি করেন।
উল্লেখ্য, গত ১৩ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঘোনা ইউনিয়নের মহাদেবনগর গ্রামের গনেশ সরকারের ছেলে কলেজ ছাত্র গৌতম সরকারকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে তার বাড়ির পাশে হত্যা করে হাত পা বেধে পুকুরে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজন আসামিকে গ্রেফতরা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুইজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
গৌতমের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম
কলেজছাত্র গৌতম হত্যাকাণ্ডের তিন দিন অতিবাহিত হচ্ছে। তার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তার মা একমাত্র ছেলের নির্মম মৃত্যুর কারণে এখনো পর্যন্ত পাগল প্রায়। তিনি চিৎকারের পর আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। বাবা গনেশ মন্ডল পাথর এর মত বসে আছেন আর ফাঁকে ফাঁকে ডুকরে কেঁদে উঠছেন। সোমবার সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মহাদেবনগর গ্রামে তার বাড়িতে গিয়ে এমন বেদনাবিধূর দৃশ্য দেখা যায়।
তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এখনো পর্যন্ত তার বাড়ির উঠানে প্রতিবেশিরাসহ ইউনিয়নের তার সকল শুভাকাক্সিক্ষরা আসছেন স্বান্তনা দিতে। কিন্তু কোন রকমে শান্ত হতে পারছেন না তারা। একমাত্র সন্তাকে হারিয়ে প্রলাপ বকছেন গৌতমের মা ও বাবা। কথা হয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য শম্ভু নাথ সরকার, ডা. কাজল কুমার মন্ডল, নিখিল চন্দ্র মন্ডল, সন্যাসী কুমার মন্ডল, জগদীশ মন্ডল, জ্ঞানেশ্বর মন্ডলের সাথে। তারা জানান, আমরা এই জনপদে হিন্দু মুসলিম মিলে যুগযুগ ধরে বসবাস করছি। কিন্তু আমরা কখনো এরকম নির্মম ঘটনা দেখিনি।
কয়েক বছর আগে থেকে এখানকার কিছু মানুষ ভারতে চলে যায়। তাদের জায়গা জমি কিনে বিভিন্ন জায়গা থেকে এসব খুনিরা এসে বাসা বেধেছে। আজ তারাই আমাদের সন্তানদের হত্যা করছে, আমরা বিচার চাই। এ ব্যপারে ঘোনা ইউনিয়নের সাবেক মেম্বর অরূণ কুমার ঘোষ জানান, এসব খুনিদের কে ফাঁসি না দিলে এলাকার মানুষ শান্তি পাবেনা। কলেজ ছাত্র গৌতম হত্যাকান্ডের পর এলাকার সর্বশ্রেণির মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
পাড়ার মানুষ তাদের সন্তানদের নিয়ে বেশ শঙ্কিত। তারা অনবিলম্বে পলাতক খুনি জামসেদ ও মিঠুকে গ্রেপ্তারের জন্য জোর দাবি জানিয়েছে। এ ব্যাপারে গ্রামবাসিদের পক্ষে ছনকা গ্রামের হাজি শাহিনুজ্জামান ডালিম, লিয়াকাত আলী, হাফিজুর রহমান, আবুবকর ছিদ্দিক সহ একাধিক ব্যক্তি জানান, খুনিরা সবাই দীর্ঘদিন ধরে থানার দালালী ও চোরাকারবারির কাজ করে। এদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পেতো না। এব্যাপারে ঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ফজলুর রহমান মোশা সহ তার পরিষদের সকল সদস্য জানান, আমরা সবাই এ ঘটনায় চরমভাবে ব্যথিত, দু:খিত ও মর্মাহত। গনেশ মন্ডল আমাদের পরিষদের একজন সম্মানিয় সদস্য। আজ তার সন্তানকে খুন করে খুনিরা আমাদের সবার মনে চরম দু:খ দিয়েছে।
তারা এসব খুনিদের চরম শাস্তির দাবি জানান। তারা এমামলাটি চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে গ্রহণ করে দ্রুতবিচার আইনে বিচার করার করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন। এব্যাপারে ঘোনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সরদার রহিল উদ্দীন সম্পাদক আবুবকর ছিদ্দিক জানান, এসব অপহরণকারী হত্যাকারীদের কে আমরা ফাঁসির দাবি জানাই।