মৌয়ালদের মধু আহরণ মৌসুম শুরু

শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট স্কুলে বাংলা ১৪৩১ সনের চলতি মৌসুমের মধু আহরণের মৌসুম উদ্বোধন করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে বুড়িগোয়ালীনি ফরেস্ট সরকারি স্কুলে পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের আয়োজনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা: রনি খাতুন।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মশিউর রহমান। অনুষ্ঠানে বনজীবী মৌয়াল ও মধু ব্যবসায়ীরা ছাড়াও এলাকাবাসীরা উপস্থিতি ছিলেন।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা: রনি খাতুন বলেন, সাতক্ষীরা সুন্দরবনে যে মধু পাওয়া যায়। এটি আর কোথায় পাওয়া যায় না। হাতে গোনা দুই একজন অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে দুর্নাম হয়েছে। সুন্দরবনের সিংহভাব বাংলাদেশেও ভারতীয় অংশ সমৃদ্ধ। এটি কাটিয়ে উঠতে হবে। তবে সুন্দরবনের আগে তুলনায় সংরক্ষণ করা গেছে। আমাদের বন বাচিয়ে রাখতে হবে। তা নাহলে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে আগামী ১০০ বছর বঙ্গোপসাগরে তলিয়ে যাবে।

খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, সড়ক পথে সুন্দরবনের দেখতে চাই। সেজন্য মৌ জাদুঘর করা হয়েছে। সুন্দরবনের অনেকগুলো পর্যটন কেন্দ্র করা হয়েছে। আগামীদিনে আরও করা হবে। সুন্দরবনের বিভিন্ন পশুপাখি, গাছ, মৌমাছি দেখে উপার্জন করবেন। আর আপনাদের সুন্দরবনের গাছ কাটা লাগবে না। ট্যুরিজম শিল্প যতবেশি বিকশিত হবে। ট্যুরিজম শিল্পকে এগিয়ে নিতে হবে। যারা হরিণ শিকার করতো। বিষ দিয়ে মাছ শিকার করতো তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরে ঘৃণিত কাজ না করার অঙ্গীকার করেছে।

সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, ১৪৩১ সালের মধু আহরণ মৌসুমে মধু সংগ্রহের সরঞ্জাম সহ মৌয়ালরা ২৪ চৈত্র সোমবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে সুন্দরবনে প্রবেশ করে প্রথম খলিশা ফুলের মধু আহরণ শুরু করে। সমগ্র আয়োজন ছিল অত্যন্ত উৎসবমুখর।

এবারের মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ১৫০০ কুইন্টাল, মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৪০০ কুইন্টাল। বিকাল ৪:০০ টা পর্যন্ত ১০২ টি নৌকা সুন্দরবনে প্রবেশ করেছে। যার মধ্যে অর্ধসহস্রাধিক বনজীবী মৌয়ালরা জঙ্গলে প্রবেশ করেছে। প্রদান করা হয়েছে ৮২টি পাস। এবছর ১৫শ’ কুইন্টাল মধু ও ৪শ’ কুইন্টাল মোম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ঈদের কারনে ১ এপ্রিলের পরিবর্তে ৭ এপ্রিল সোমবার থেকে মধু সংগ্রহের মৌসুম শুরু হয়েছে।

এসও জিয়া জানান, ২২-২৩ অর্থ বছরে সুন্দরবন থেকে মৌয়ালরা মধু সংগ্রহ করেছেন ১০২৩ কুইন্টাল এবং মোম সংগ্রহ করেন ৩০৬.৯০ কুইন্টাল। ২৯০টি পাশের মাধ্যমে ২০৪৬জন মৌয়াল সুন্দরবনে প্রবেশ করে উক্ত মধু ও মোম সংগ্রহ করেন।

পরবর্তী ২৩-২৪ অর্থ বছরে ৩৬৪টি পাশের মাধ্যমে ২৪৭০ জন মৌয়াল সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করতে যায়। তাদের সংগৃহীত মধু ১২৩৫ কুইন্টাল এবং মোম ৩৭০ দশমিক ৫০ কুইন্টাল। পবিত্র ঈদুল ফিতরের কারণে প্রতি বছরের মতো ঐতিহ্য ধরে রেখে এ বছর পহেলা এপ্রিলে মধু আহরণ করতে সুন্দরবনে যায়নি মৌয়ালরা। তবে পাশ দেয়া হয় ১এপ্রিল থেকে। ঐদিন সুন্দরবনে আনুষ্ঠানিকভাবে মধু সংগ্রহ উৎসব শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা পরিবর্তন করে ৭ এপ্রিল সোমবার আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয়।
প্রসঙ্গত, মধু সংগ্রহ উৎসব মুলত মৌয়ালদের হলেও এ উৎসব সর্বজনীন। এউৎসব দেখার জন্য স্থানীয় এলাকাবাসীর পাশাপাশি দেশ ও বিদেশের পর্যটকরা ভীড় জমায় সুন্দরবন এলাকায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.