প্রতিবন্ধিতা নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে প্রয়োজন গণমাধ্যমের সক্রিয় ভূমিকা

নিজস্ব প্রতিবেদন: আসন্ন নির্বাচনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার ও পরিকল্পনা কী, সে বিষয়গুলো গণমাধ্যমকর্মীদের নজরে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং তাঁদের নিয়ে প্রচলিত নেতিবাচক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক জাগরণ সৃষ্টির ওপর জোর দিয়ে তারা বলেন, প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে গণমাধ্যম যত বেশি সংবেদনশীল ও সক্রিয় হবে, রাজনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক কাঠামোয় তত বেশি ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। এজন্য গণমাধ্যমের সম্পাদকীয় নীতি ও চর্চায় প্রতিবন্ধিতার অন্তর্ভুক্তি জরুরি।

আজ ঢাকায় অনুষ্ঠিত “গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও প্রতিবন্ধিতার অন্তর্ভুক্তি: সম্পাদকীয় নীতি ও চর্চা” শীর্ষক এক সংলাপে বক্তারা এ আহ্বান জানান। ইউনেস্কো ঢাকা অফিসের সহযোগিতায় গণমাধ্যম ও যোগাযোগবিষয়ক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান সমষ্টি আয়োজিত সংলাপে ইউনেস্কো প্রণীত গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধী সমতা বিষয়ক ব্যবহারিক নির্দেশিকার ভিত্তিতে প্রতিবন্ধী অন্তর্ভুক্তিমূলক চর্চা এগিয়ে নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক রিয়াজ আহমদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি ড. সুজান ভাইজ। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মুহম্মদ হিরুজ্জামান। সংলাপে অংশ নেন বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সাংবাদিক সংগঠনের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের প্রতিনিধি এবং উন্নয়ন ব্যক্তিত্বরা ।

সমষ্টি’র নির্বাহী পরিচালক মীর মাসরুরুজ্জামান ব্যবহারিক নির্দেশিকার বাংলা রূপান্তরের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন। এ-টু-আই প্রকল্পের জাতীয় পরামর্শক ভাস্কর ভট্টাচার্য গণমাধ্যম বিষয়বস্তুতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশগম্যতা বিষয়ে আলোচনা করেন এবং অনলাইন কনটেন্ট প্রবেশগম্য করার কিছু ব্যবহারিক দিক তুলে ধরেন।

ড. সুজান ভাইজ বলেন, “ঐতিহাসিকভাবে প্রতিবন্ধিতাকে সমাজে অভিশাপ হিসেবে দেখা হয়েছে। গণমাধ্যম এ ধরনের ধারণা বদলাতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে। যতদিন এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে, ততদিন বৈষম্য ও বাধা থাকবে, তা ব্যক্তি পর্যায়ে হোক বা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে।” তিনি আরও বলেন, “সচেতনতা বৃদ্ধি অবশ্যই জরুরি, তবে শুধু সচেতনতা নয়, কার্যকর পদক্ষেপে যাওয়া এখন সময়ের দাবি। এ দায়িত্ব পালনে গণমাধ্যমকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।”

মুহম্মদ হিরুজ্জামান বলেন, “আমরা যতটা সম্ভব দ্রুত সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক বিশেষ অধিবেশন অন্তর্ভুক্ত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব, যাতে তারা আরও সংবেদনশীলতা, দায়িত্বশীলতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রতিবেদন করতে সক্ষম হন।”

রিয়াজ আহমদ বলেন, “প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক সম্পাদকীয় নীতি ও সংবাদকক্ষের কার্যপ্রণালিতে পরিবর্তন আনতে হলে শুধু সাংবাদিক নয়, সংবাদকক্ষের অন্যান্য কর্মী ও ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতেও আমাদের বিনিয়োগ করতে হবে। গণমাধ্যমের সংস্কৃতিতে টেকসই পরিবর্তন তখনই আসবে, যখন প্রতিষ্ঠানটির সবাই অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিবেদনের জ্ঞান, দক্ষতা ও অঙ্গীকার ধারণ করবে।”

ভাস্কর ভট্টাচার্য বলেন, “প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশগম্যতা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে তাদের জন্য উদ্বুদ্ধকরণ ও সক্ষমতা উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন।

প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সোহরাব হাসান, চ্যানেল আইয়ের চিফ এক্সিকিউটিভ এডিটর এম জাহিদ নেওয়াজ খান, লেখক ও সাংবাদিক শাহনাজ মুন্নী, যুগান্তরের শুচি সৈয়দ, মানবজমিনের কাজল ঘোষ, বিএফইউজের আরফানুল হক নাহিদ, ক্র্যাবের এম এম বাদশাহ্, জাতীয় প্রেসক্লাবের শাহনাজ বেগম পলি, বিজেসির শাহনাজ শারমিন, ডিআরইউ’র নাদিয়া শারমিন, উইমেন আইয়ের রীতা ভৌমিক, ইত্তেফাকের রাবেয়া বেবী, ডেইলি স্টারের নীলিমা জাহান, বি-স্ক্যানের সুমনা খান, সাইট সেভার্সের অয়ন দেবনাথ, এসআরএস-এর সিকান্দার আলী মিনা, আরবান-এর আরিফুজ্জামানসহ অন্যরা।

শেষে উপস্থিত সাংবাদিকরা তাদের চর্চায় ব্যবহারিক নির্দেশিকা অনুসরণের অঙ্গীকার করে প্রতিশ্রুতিপত্রে স্বাক্ষর করেন।