বৈশ্বিক ঐক্য ও সহমর্মিতার ভিত্তিতে জলবায়ু সংকট মোকাবেলার আহ্বান

জলবায়ু সংকট কেবল টিকে থাকার প্রশ্ন নয়, এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তা এবং বহু রাষ্ট্রের অস্তিত্বের সঙ্গেও জড়িত। সীমিত সময় ও সম্পদের কারণে এখনই বৈশ্বিক ঐক্য ও সহমর্মিতার ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে নীতিনির্ধারক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা বলেছেন, টেকসই ভবিষ্যতের জন্য সবুজ-দক্ষতা, পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো এবং স্থানীয় নেতৃত্বকে শক্তিশালী করা জরুরি।

শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে আয়োজিত ‘বায়োফিলিয়া: রিকানেক্টিং পিপল, ক্লাইমেট অ্যান্ড কালচার’ শীর্ষক উৎসবে এ আহ্বান জানান তারা।

সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের ক্লাইমেট অ্যাকশন অ্যাট লোকাল লেভেল’ (কল) কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজিত দিনব্যাপী উৎসবটির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করে এই উদ্যোগের জলবায়ু যোগাযোগ অংশীদার যুব-নেতৃত্বাধীন থিঙ্ক-অ্যান্ড-ডু ট্যাঙ্ক “জেনল্যাব”। কমিউনিটি-নেতৃত্বাধীন জলবায়ু কার্যক্রম এবং সংস্কৃতির ঐক্যকে উদযাপন করতে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে কূটনীতিক, নীতিনির্ধারক, কমিউনিটি নেতা, শিল্পী, উদ্ভাবক এবং সাধারণ নাগরিকরা অংশ নেন।

উদ্বোধনীপর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বিশেষ অতিথি  ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর অ্যাগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট-এর এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের কান্ট্রি ডিরেক্টর এবং প্রতিনিধি ভ্যালেন্টাইন আচানচো।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় জ্ঞানভিত্তিক উদ্যোগ ও বৈশ্বিক ঐক্য ও সহমর্মিতা জরুরি। আমাদের হাতে সীমিত সময় ও সম্পদ রয়েছে, তাই যৌথভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ সংকট কেবল টিকে থাকার প্রশ্ন নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তা ও বহু রাষ্ট্রের অস্তিত্বের সাথেও জড়িত।”this photo shows 13 people posing for camera including advisor Syeda Rizwana Hasan.

অনুষ্ঠানের শুরুতে সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের চার্জ দে অ্যাফেয়ার্স কোরিন হেঞ্চোজ পিগনানি এবং দূতাবাসের শাসন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ শাখার প্রোগ্রাম ম্যানেজার শিরিন লিরা অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে আয়োজনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

উৎসবের সূচনা হয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে। সাঁওতাল শিল্পী, বাউল ও অন্য সংগীতশিল্পীরা লোকজ সুরে মানুষ ও প্রকৃতির বন্ধন তুলে ধরেন। সকালে গল্প-বলার অধিবেশনে বায়োফিলিয়ার প্রতিপাদ্য উপস্থাপিত হয়। এরপর তৃণমূলের প্রতিনিধিরা মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। ‘সিনার্জি ফর লোকাল ক্লাইমেট সলিউশনস’ শীর্ষক আলোচনায় নীতিনির্ধারক ও বিশেষজ্ঞরা স্থানীয় জলবায়ু উদ্যোগে সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

বিকেলে জলবায়ু উদ্যোগবিষয়ক অধিবেশনে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, টেকসই কৃষি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পূর্ব-সতর্কীকরণ ব্যবস্থার উদ্যোগ প্রদর্শিত হয়। এছাড়া আলোচকচিত্র প্রদর্শনী, ফ্যাশন প্রদর্শনী, যেখানে কবিতা, নৃত্য, নাটকসহ সাংস্কৃতিক পর্বও ছিল উৎসবে।

সমাপনী সেশনে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “যদি আমরা আমাদের নদীগুলো এবং এর ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবিকা রক্ষা করতে চাই, তাহলে আমাদের সবুজ-দক্ষতা ও সবুজ অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করতে হবে।” বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সবাইকে জলবায়ু সুরক্ষার জন্য অঙ্গীকার করতে আহ্বান জানান।

এ  অধিবেশনে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আইনুন নিশাত এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মহাসচিব ড. কবির এম. আশরাফ আলম এনডিসি। সমাপনী বক্তব্যে কোরিন হেঞ্চোজ পিগনানি বাংলাদেশের জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধিতে সুইজারল্যান্ডের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি