প্রতিনিধি, বাগেরহাট: বাগেরহাটের চিতলমারীতে চিত্রা নদীর দুই পাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় গড়ে উঠা ‘নতুন সুন্দরবন’ নামে পরিচিত বনের গাছ কেটে উজাড় করা হচ্ছে। সুন্দরী, গোলপাতা, কেওড়া, গেওয়া, ওড়াসহ নানা প্রজাতির গাছসহ প্রাকৃতিক এই বন রক্ষায় বন বিভাগ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে ঘোষণা দেয়ায় পর এক শ্রেণির অসাধু লোকজন গাছ কেটে সাবাড় করছে। ফলে সুন্দরবনের প্রায় সব বৈশিষ্ট্য নিয়ে গড়ে উঠা নতুন এ বন হুমকির মুখে পড়েছে। এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদীরা দ্রুত এই বন রক্ষার জোর দাবি জানিয়েছেন।
সুন্দরবনের মূল ভূ-খণ্ড থেকে প্রায় একশ কিলোমিটার উত্তরে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেঁষে বয়ে যাওয়া খরস্রোতা চিত্রা নদীর চর ও আশপাশের দুই পাড়ে ১৫-২০টি গ্রাম জুড়ে গড়ে উঠেছে এই বন। উপজেলার রায়গ্রাম, শুরিগাতী, খিলিগাতী, করাতদিয়া, ডুমুরিয়া, আড়ুলিয়া, খড়িয়া ইত্যাদি গ্রাম মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে এখন বনাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। এখানকার অধিকাংশ বাড়ির আঙ্গিনাসহ আশপাশে আবাদি-অনাবাদি জমিতেও এখন গোলপাতা, কেওড়া, ওড়া, সুন্দরীসহ নানা প্রজাতির গাছ প্রাকৃৃতিকভাবে বেড়ে উঠছে। এছাড়া নদীর দু’কূল জুড়ে বিস্তীর্ণ চর এলাকায় দিন দিন বাড়ছে গাছের সংখ্যা।
বাঘ-হরিণের দেখা না মিললেও সুন্দরবনের নানা ধরনের বন্য প্রাণীর দেখা মিলেছে এখানে। এটা এখন অরণ্যের রূপ পেয়েছে, সুন্দরবনেরই একটা অংশ বলে মনে হয় বনটিকে। মেছোবাঘ, বাগডাসা, খাটাশ, বিষধর সাপ, তক্ষক, বনবিড়াল, শিয়াল, গুঁইসাপসহ বিপন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বিচরণ ভূমি নতুন বন। মৌমাছিরা বনের গাছপালায় মৌচাক তৈরি করছে। মাছরাঙা, ঘুঘু, শালিক, টিয়া, পানকৌড়ি, বক, দোয়েল, ঘড়িয়াল, টুনটুনিসহ প্রায় অর্ধশত প্রজাতির পাখির সন্ধান মিলেছে এখানে। এসব পাখিদের কলকাকলিতে বন এখন মুখরিত। সুন্দরবনের প্রায় সব প্রজাতির উদ্ভিদ জন্মেছে এখানে। এতে গ্রামবাসীর মধ্যে যেমন আশার আলো দেখা দিয়েছে তেমনি পরিবেশের জন্য এ বন এখন আশীর্বাদ।
সম্প্রতি বন বিভাগের কর্মকর্তারা নবসৃষ্ট বনটি পরিদর্শন করেন। তারা এই বন রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানান। এ ঘোষণার পর এক শ্রেণীর অসাধু লোকজন এখানকার গাছপালা কেটে নিতে শুরু করেছে। ফলে বনটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে।
চিত্রাপাড়ের বাসিন্দা ও ডুুমুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অব্দুল জলিল ফকির, সাবেক ছাত্র নেতা সুভাষ মন্ডলসহ অনেকে জানান, বনটি রক্ষা করা খুবই জরুরি। যাতে আর কেউ বনের গাছপালা কেটে ধ্বংস করতে না পারে সে ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
চিতলমারী উপজেলা বন কর্মকর্তা চিন্ময় মধু জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হচ্ছে। কেউ বনের গাছ কাটার আর কোনো প্রকার সুুযোগ না পায় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।