নিয়োগ বাণিজ্যে সায় না দেয়ায় কলাপাড়ায় প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলা

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী): পছন্দমতো শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় ও নিয়োগকৃত শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা আদায় না করায় ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের সামনে প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র সিমলাইকে কিল-ঘুষি ও চেয়ার দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছে ম্যানেজিং কমিটির তিন সদস্য। কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের ফরিদগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শনিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

আহত শিক্ষককে ওইদিন রাতে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় রোববার অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন করে জড়িতদের শাস্তি দাবি করে বিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা।

kalapara student protest over assaulting teacher
শিক্ষকের ওপর হামলার প্রতিবাদে স্কুলের শিক্ষার্থীরা ক্লাশ বর্জন করে মানবন্ধন করে।

জানা গেছে, গত ২৭ জুন বিদ্যালয়ে চার শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। এই শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়ায় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য দেলোয়ার হোসেন, মনিরুজ্জামান সানু ও আবুল বাসারের পছন্দমতো শিক্ষক না হওয়ায় তারা নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের কাছ থেকে ছয় লাখ টাকা আদায়ের জন্য প্রধান শিক্ষককে চাপ দেয়। কিন্তু প্রধান শিক্ষক এতে রাজি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে শনিবার তারা পিটিয়ে আহত করে।

আহত প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র সিমলাই বলেন, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির নির্দেশ মতো স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় এই চার শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষায় তাদেরও দুজন প্রার্থী ছিল। কিন্তু পরীক্ষায় তাদের অবস্থান ছিল ষষ্ঠ ও সপ্তম। যারা প্রথম হয়েছে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই শিক্ষকদের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা করে আদায়ের জন্য চাপ দেয়। কিন্তু তিনি রাজি না হওয়ায় তার ‌ওপর হামলা চালায়।

বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র নসরুল খান ও দশম শ্রেণির ছাত্র রুসাত আকন বলেন, প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনায় তারা ব্যথিত। তাই সব ছাত্রছাত্রী আজ প্রতিবাদে নেমেছে।

অভিভাবক প্রতিনিধি মো. নুরুল আমিন জানান, প্রধান থিক্ষকের ওপর হামলাকারী তিন ম্যানেজিং কমিটির সদস্যকে বহিষ্কার ও তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত তাদের এ ক্লাস বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

এ ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মনিরুজ্জামান শানু এ প্রতিনিধিকে জানান, তারা বিদ্যালয়ের ফার্নিচার ও আসবাবপত্র  ক্রয়ের জন্য ওই চার শিক্ষকের কাছ থেকে ডোনেশন নেয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে বলেছেন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। তারা শিক্ষককে মারেননি বলে দাবি করেন।

বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি কলাপাড়া উপজেলা শাখার সভাপতি ও খেপুপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাদাৎ হোসেন বিশ্বাস জানান, শিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী রুহুল আমিন জানান, তিনি প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনা শুনেছেন। আহত শিক্ষক লিখিত অভিযোগ করলে এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.