প্রতিনিধি, শেরপুর: মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, রাজনীতিক মো. মহসীন আলী মাস্টারের দাফন আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে শেরপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে সম্পন্ন হয়েছে।
এর আগে দুপুর ২ টায় শহরের মাইসাহেবা জামে মসজিদ চত্ত্বরে প্রথম ও মির্জাপুর গ্রামের ঈদগাহ মাঠে দ্বিতীয় নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযার পূর্বে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত শহরের চকবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে তার মরদেহ রাখা হলে বিভিন্ন সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

জানাযা ও শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে শোক প্রকাশ করতে গিয়ে বিভিন্ন বক্তা তাদের দেওয়া বক্তব্যে মহসীন আলীকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না দেয়ায় ক্ষোভ এবং হতাশা প্রকাশ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হয়েও তিনি রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না পাওয়া সবাই হতাশা প্রকাশ করেন।
শেরপুর চেম্বারের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. মাসুদ মহসীন আলীকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না দেওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, কেবলমাত্র সরকারি গেজেটে নাম না থাকার অজুহাতে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না দেওয়াটা রাষ্ট্রের দৈন্য। অথচ মুজিবনগর সরকারের কর্মচারীরা সকলেই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত। আমরা তার হাত দিয়েই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। তিনি ভারতের ঢালু ইয়ুথ ক্যাম্পের ইনচার্জ ছিলেন। যেখান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের রিক্রুট করা হতো। তিনি জানাযায় জানান, আমরা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, গেজেটে তার নাম নেই। মহসীন স্যার এবার মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্রের জন্য আবেদন করেছিলেন, কিন্ত এখনো সেসব যাচাই-বাছাই শেষ হয়নি। হয়তো তিনি মুক্তিযোদ্ধার সনদ পাবেন, কিন্তু তখন তো আর তাকে সম্মান দেওয়া যাবে না।
জেলা জাসদ সভাপতি মনিরুল ইসলাম লিটন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে যে কয়জন প্রথম ভারত যান তাদের মধ্যে মহসীন স্যার ছিলেন অন্যতম। তিনি যুদ্ধের সময় ইয়ুথ ক্যাম্প ইনচার্জ ছিলেন। মহসীন স্যার ছিলেন প্রচারবিমুখ। তিনি নিজের জন্য কখনো কিছু চাননি। বঙ্গবন্ধুর সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিলো, নামেই তাকে বঙ্গবন্ধু চিনতেন। সবাই তার ব্যাপারে জানেন, কিন্তু তার প্রাপ্য সম্মান আমরা দিতে পারলাম না, এটা আমাদের জন্য লজ্জার। এসব ভুল অবশ্যই সংশোধন করতে হবে।
শ্বাসকষ্টজনিত কারণে বুধবার মধ্যরাতে শেরপুর শহরের রাজাবাড়ি এলাকার নিজ বাসভবনে মহসীন আলী মারা যান। প্রায় একমাস যাবত ঢাকার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর বুধবার রাতে বাড়ি ফেরার তিন ঘন্টার মধ্যে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি স্ত্রী, চার ছেলে, দুই মেয়ে রেখে গেছেন।
মহসীন আলী মাস্টার মহান মুক্তিযুদ্ধে শেরপুরের সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে তিনি ভারতের ঢালু ইয়ুথ ক্যাম্পের ইনচার্জ ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি শেরপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। রাজনীতির পাশপাশি তিনি শেরপুরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও সমাজসেবামূলক কাজের সাথে জড়িত ছিলেন। শতবর্ষের ঐতিহবাহী শেরপুর সরকারি ভিক্টোরিয়া একাডেমির প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বও পালন করেছেন। শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজের তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ইউনুছ প্রেস নামে তার মুদ্রণ ব্যবসাও ছিলো। মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত তিনি শেরপুরের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের আহবায়ক এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিএসের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
মহসীন আলীর মৃত্যুতে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, হুইপ আতিউর রহমান আতিক, সংসদ সদস্য প্রকৌশলী ফজলুল হক চাঁন, সংসদ সদস্য ফাতেমাতুজ্জহুরা শ্যামলী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও পৌর মেয়র হুমায়ুন কবীর রুমান, এফবিসিসিআই পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা মো. মাসুদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, সাংবাদিক বিপ্লবী রবি নিয়োগী সভাকক্ষ পরিচালনা পর্ষদ, পাতাবাহর খেলাঘর আসর, আরডিএস পরিবার এবং বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন শোক প্রকাশ করেছেন।
