প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ ও খুলনা: গোপালগঞ্জে মাইক্রোবাস ও ইজিবাইকের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের ছয়জনসহ সাতজন নিহত হয়েছে। এতে আরো একজন গুরুতর আহত হয়েছে।
শনিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে গোপালগঞ্জ-কোটালীপাড়া সড়কের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার শিবপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার তেলিগাতি গ্রামের মৃত নসু মিয়ার ছেলে খোকন সিকদার (৪৫), তার স্ত্রী চায়না বেগম (৩৮), মেয়ে এ্যানিয়া (১৬), চাঁদনী (৮), খোকন সিকদারের মা কাতেবুন নেছা (৬৫), ভাই হাসান সিকদারের ছেলে সাকিব (১৩) ও ইজিবাইক চালক খানারপাড় গ্রামের কালাম সরদারের ছেলে স্বপন সরদার (৩৫)। গুরুতর আহত হয়েছে খোকন সিকদারের অপর মেয়ে ইতিমনি (১৩)। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় খুলনার গাজী মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। পরিবারটি খুলনা মহানগরীর বাসিন্দা।

আহতদের স্বজনরা জানিয়েছেন, খোকন সিকদার খুলনা থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গ্রামের বাড়ি মাঝিগাতি ইউনিয়নের তেলিগাতি গ্রামে আসছিলেন। তারা খুলনা থেকে বাসে এসে গোপালগঞ্জের বেদগ্রাম বাসস্ট্যান্ডে নামেন। সেখান থেকে তারা একটি ইজিবাইক ভাড়া করে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হন। শিবপুরে আসলে বিপরীত দিক থেকে আসা জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ষ্টিকার সম্বলিত একটি মাইক্রোবাসের (ঢাকা মেট্রো-চ-১৫-৬৯৩০) সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে একজন ও গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে আনার পথে চারজন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজন মারা যায়।
নিহতের স্বজন বাচ্চু সিকদার জানিয়েছেন, খোকন সরদার এক আত্মীয়ের বিয়ে উপলক্ষে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গোপালগঞ্জের তেলিগাতি গ্রামের বাড়িতে আসছিলেন। তাদের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
গোপালগঞ্জ ফায়ার স্টেশন অফিসার মো. নিয়ামুল হুদা জানিয়েছেন, খবর পেয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত মো. সেলিম রেজা বলেছেন, নিহতরা ছয়জনই একই পরিবারের সদস্য। এছাড়া ইজিবাইকের চালকও মারা গেছেন।
খুলনায় শোকের মাতম
নিহতদের খুলনার বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। স্বজন আর প্রতিবেশীদের কান্নায় যেন প্রকৃতিও ডুকরে কেঁদে উঠছে। নিহতদের বাড়িতে ছুটে আসছেন চেনা-অচেনা শত শত মানুষ।
রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে খুলনা মহানগরীর জিন্নাহপাড়া হাজী আব্দুল মালেক স্কুল রোডের ৭১/৩ “শান্তিকুঞ্জে” গিয়ে এমন করুণ দৃশ্য দেখা যায়।
খোকনের খালাতো ভাই নাজমুল বিলাপরত অবস্থায় ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, তারা শুনেছেন মাইক্রোবাসটির চালক তার ছেলেকে ড্রাইভিং শিখাচ্ছিলেন।
খোকন শিকদারের ভাগ্নে রায়হান মুন্না বাকরুদ্ধ অবস্থায় বলেন, ছোটবেলায় মা মারা যাবার পর নানি, মামা-মামির কাছে বড় হয়েছি। মায়ের সকল আবদার পূরণ করেছেন তারা। আজ তারা এভাবে চলে যাবেন, ভাবতেও পারিনি। তিনি ঘাতক চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। মুন্না বলেন, এক সাথে এত লাশ, এত শোক কীভাবে সইব। কীভাবে দিব মাটি। শান্তি কুঞ্জে এখন থাকার আর কেউ নেই।
তার আরেক মামা সৌদি প্রবাসী হাসান মৃত্যুর খবর শুনে দেশের আসার পর দাফন সম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি। মরদেহগুলো এখন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমাগারে রয়েছে।
খোকন শিকদারের প্রবাসে থাকা ভাইয়ের স্ত্রী মমতাজ অনেকটা প্রায় সংজ্ঞাহীন অবস্থায় কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমাদের আর কেউ রইল না। মা মমতাজের কান্না দেখে অবুঝ শিশু তামিমও (৭) যেন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। বাড়িতে এতো মানুষ দেখে বার বার প্রশ্ন করছে। দাদি-চাচা-চাচিরা আসছে না কেন? কিন্তু কেউই তার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না।