জাহিবা হোসাইন, মংলা (বাগেরহাট): মংলা বন্দরের একটি কন্টেইনার থেকে বিদেশ থেকে আমদানি করা ৫০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের ২৫৬ বেল কাপড় খোয়া যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এসব কাপড় বাজেয়াপ্ত করে নিলামে বিক্রি করেছিল। সংরক্ষিত জেটি থেকে ক্রেতা মালামাল বুঝে নিতে গেলে কাপড় খোয়া যাওয়ার ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে কাস্টমসের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অপরদিকে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে মংলা থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার গাজীপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ঠিকানার নাসির জামান ইনটাওয়ার লিমিটেড নামের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ফ্যাব্রিক কাপড়ের মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বিদেশ থেকে ২৭০ গাঁইট উন্নতমানের স্যুটিং কাপড় (কোট-প্যান্টের কাপড়) আমদানি করে। ২০ ফুট লম্বা একটি কন্টেইনারে (নং টিসিএল ইউ ২০১০৬৯১) করে এসব কাপড় আনা হয়। কাপড় ছাড় করানোর জন্য সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট নিয়োগ দেয়া হয় খুলনার পুরাতন যশোর রোডের ৭নং ঘাটের শরীফ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালকে। মিথ্যা ঘোষণার বিষয়টি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জেনে যাওয়ায় মামলার ঝামেলা এড়াতে ওই এজেন্ট আমদানি করা ওই কাপড় ছাড় করায়নি।
পরবর্তীতে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কাস্টমস কর্তৃপক্ষ গত ২৪ জুন ওই কাপড় প্রকাশ্য নিলামে ৪৮ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। নয় শতাংশ ভ্যাট এবং আয়কর মিলে নিলামকৃত কাপড়ের মোট মূল্য দাঁড়ায় ৫২ লাখ ৩২ হাজার টাকা। মেসার্স বাবুল ট্রেডার্স নিলামে কাপড় কেনে। কেনার আগে প্রতিষ্ঠানটি সরেজমিন মালামাল পরীক্ষাও করে। ওই সময় কাপড় ভর্তি কন্টেইনারটি বন্দর জেটির ২ নং ইয়ার্ডের মধ্যে ছিল।
ক্রেতার প্রতিনিধি আলী আক্কাস বলেন, গত ২২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকালে মালামাল বুঝে নিতে এসে কাপড় ভর্তি কন্টেইনারটি বন্দরের ৬ নং ইয়ার্ডের সামনে নদীর কাছে তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। কন্টেইনারটি খুলে তার মধ্যে মাত্র ১৪ বেল (গাঁইট) কাপড় পাওয়া যায়। বাকি ২৫৬ বেল কাপড় লাপাত্তা।
এ ব্যাপারে মংলা কাস্টমস কমিশনার ড. আল আমিন প্রামাণিক বলেন, কাপড় ভর্তি কন্টেইনার থেকে কাপড় খোয়া যাওয়ার ঘটনা তদন্তে কাস্টমস জেটি সহকারী কমিশনারের সমন্বয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অপরদিকে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে মংলা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
বন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় নৌ বাহিনী, আনসার ও বন্দরের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে অর্ধকোটি টাকার কাপড় গায়েবের ঘটনা সম্পর্কে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ বিএন বলেন, আমদানি করা এসব মালামালের শুল্কায়ন ও অবমুক্তের বিষয়টি শুল্ক কর্তৃপক্ষের বিষয়। ওই মালামালের ওপর বন্দরের কোনো কর্তৃত্ব নেই, বন্দর শুধু নির্ধারিত জেটি বা গোডাউন ভাড়া আদায় ও সেবার বিষয়টি দেখভাল করে। বন্দর চেয়ারম্যান আরো বলেন, আমি যতটুকু খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি কন্টেইনারটি খোলার সময় বন্দর বা কাস্টমসের কোনো কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। ধারণা করা হচ্ছে, মংলা বন্দরের চলমান উন্নয়নের পথে একটু দুর্নাম ছড়ানোর জন্য কোনো পক্ষ ঘটনাটি সাজাতে পারে। তবে নিলাম ক্রেতার প্রতিনিধি আলী আক্কাস বলেন, কন্টেইনার কাস্টমসের লোকেই খুলে দেয় এবং বন্দরের লোকও সেখানে উপস্থিত ছিল। তবে তিনি তাদের নাম-পরিচয় জানাতে পারেননি। তিনি আরো বলেন, কন্টেইনারের মধ্যে কী ধরনের পণ্য আছে এবং কন্টেইনারের নাম্বার যাদের জানা আছে তারাই মালামাল গায়েবের সাথে জড়িত থাকতে পারে।