এম. সুরুজ্জামান, শেরপুর: চট্রগ্রামের পটিয়ার বাসিন্দা স্বঘোষিত যোগী প্রবীর চৌধুরীকে ১০ অক্টোবরের মধ্যে শেরপুর ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাত ১১ টায় শেরপুর জেলা প্রশাসকের বাসভবনে এক জরুরি সভায় ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় জেলা প্রশাসক ডা. এ এম পারভেজ রহিম, সরকারি কৌশুলী ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পাল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল ওয়ারিশ, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দেবাশীষ ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক কানু চন্দ্র চন্দ, যোগী প্রবীর চৌধুরী ও তার দুই শিষ্য উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কানু চন্দ্র চন্দ বলেন, সভায় ওই স্বঘোষিত ব্রক্ষ্মচারীকে তার কার্যকলাপ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি অধিকাংশ প্রশ্নের সঠিক কোনও জবাব দিতে পারেননি। তবে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ও পাথর বিক্রির কথা তিনি স্বীকার করেছেন। ফেসবুকে ধর্ম নিয়ে আর কোন বিতর্কিত কথা লিখবেন না বলে তিনি অঙ্গীকার করেন। পরে সভার সকলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে তিনি শেরপুর ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত মেনে নেন।
সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে আজ ৩ অক্টোবর শনিবার সকালে শহরের গোপাল জিউর মন্দির প্রাঙ্গণে পুরোহিত কল্যাণ পরিষদের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিজয় চক্রবর্তী বিপুলের সভাপতিত্বে সভায় জেলা পুরোহিত কল্যাণ পরিষদের ৫০ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব চক্রবর্তী সঞ্জু সাংবাদিকদের জানান, শুক্রবার রাতে জেলা প্রশাসকের বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা আপাতত: দুর্গাপূজা বর্জনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছি। তবে ১০ অক্টোবরের পরে যদি ওই ভন্ড যোগী শেরপুর ত্যাগ না করে তাহলে আমরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবো।
এদিকে ওই ভন্ড যোগীর শেরপুর ত্যাগের খবর প্রচারিত হওয়ার পর জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে শেরপুর ভবতাঁরা কালি মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক টুকন সাহা বলেন, চিকিৎসার নামে ওই প্রতারক লাখ লাখ টাকা কামিয়ে শহরের কিছু সন্ত্রাসী ও মাদক সেবীকে লালন পালন করছে। তার বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ ছিল।
মাধবপুর এলাকার বাসিন্দা পিটুল দত্ত বলেন, থেরাপির নামে ভন্ড যোগী নারীদের গায়ে হাত দিয়েছে। তাকে গ্রেফতার করা হোক।
শহরের শিববাড়ী মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক কানাইলাল চৌহান বলেন, তিনি বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি নিয়ে ভারতে গেছেন কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
শেরপুর চেম্বারের পরিচালক অজয় চক্রবর্তী জয় বলেন, ওই যোগী হরিদ্বারে ১০ বছর ব্রাহ্মচর্য পালন করেছেন বলে দাবি করেন। যদি বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকেন তবে দেখা উচিৎ তিনি সরকারের অনুমতি নিয়ে পাসপোর্ট ভিসা করে ভারতে গেছেন কিনা। ইসকন সদস্য অপূর্ব শ্যাম জগন্নাথ বলেন, খুব ভাল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে শেরপুরের জেলা প্রশাসক ডা. এ এম পারভেজ রহিম বলেন, অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। এখন হিন্দু সম্প্রদায় নিশ্চিন্তে উৎসব পালন করতে পারবে।