খুলনায় পাট গুদামে আগুনের সূত্র পায়নি কেউ, ‘রহস্যজনক’ বলছে দমকল বিভাগ

প্রতিনিধি, খুলনা: খুলনার দৌলতপুরে এফ আর জুট ট্রেডিং কোম্পানির পাট গুদামে আগুন লাগার কোনো সূত্র বা রহস্যের সন্ধান পায়নি কেউ।

তবে দমকল বিভাগের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, আগুন লাগার পর ব্যাংকের গার্ডরা রহস্যজনকভাবে পালিয়ে ছিল।

গুদামের পাটে আগুন লাগার ঘটনায় খান ব্রাদার্স এবং এফ আর জুটের পক্ষে দৌলতপুর থানায় দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। এসব জিডিতে ক্ষয়ক্ষতির কোনো পরিমাণ দেয়া হয়নি।

শনিবার গভীর রাতে গুদামটিতে আগুন লাগে। রোববারও দিনভর দমকল বিভাগের কর্মীরা আগুন নিভানোর কাজ করেছে। তবে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, শনিবার গভীর রাতে এবং রোববার পৃথক সময়ে পৃথকভাবে জিডি দুটি দাখিল করা হয়।

এফ আর জুটের ম্যানেজার বঙ্গলাল সাহা বাদী হয়ে যে লিখিত জিডি করেছেন সেখানে কোনো পাটের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। বলা হয়েছে আগুনে পুড়ে বিপুল পরিমাণ টাকার ক্ষয়তি হয়েছে। তিনি খাতাপত্রে কী পরিমাণ পাট ছিল তা উল্লেখ করেননি। কীভাবে আগুন লাগতে পারে বলে শোনা গেছে সে ব্যাপারেও এই জিডিতে কিছু বলা হয়নি।

অপরদিকে গুদাম মালিক খান ব্রাদার্সের পক্ষে জনৈক কামাল হোসেন জিডি করে বলেছেন, তাদের ভাড়া দেয়া গুদামে আগুন লেগে গুদামের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

এফ আর জুট কোম্পানি লিমিটেডের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর সিআইপি আলহাজ  শরীফ ফজলুর রহমান জানান, গত বছর পাটের দাম কম ছিল, এবার যখন দাম বাড়তির দিকে তখন এই আগুন লাগায় তার ৩০ কোটি টাকার রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি জানান. নভেম্বর–ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা রপ্তানির শিডিউল করা ছিল। তিনি ঘটনার সময় অফিসে ছিলেন এবং পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বাসায় চলে আসেন বলে জানান। তিনি জানান, আগুনে পাট পুড়ে যাওয়ার ক্ষতিপূরণ বীমা হতে পাওয়া গেলেও তার ব্যবসার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। যা টাকার অংকে নিরুপণ করা সম্ভব নয়।

দৌলতপুর সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখার ডিজিএম এমডি আবু হোসেন শেখ জানান, ব্যাংকের খাতাপত্র অনুযায়ী আগুন লাগা গুদামে পাট ছিল ১৫ হাজার ৩০ বেল, যার মূল্য ১৩ কোটি ৪ লাখ ৩৭ টাকা। তিনি জানান, গুদাম পাহারা দিতে ফাইভ স্টার  সিকিউরিটি সার্ভিসের তিনজন দায়িত্ব পালন করছিল। তবে তিনি গার্ডদের পালিয়ে যাওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, গুদামকিপার ছিলেন কাজী সৈয়দ আবুল সাউদ। ঘটনার সময় গুদাম বন্ধ থাকায় তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। আবু হোসেন শেখ আরো জানান, গুদামে ১৬ কোটি টাকার পাটের বীমা করা রয়েছে গ্রীন ডেল্টা ইনসুরেন্সে। তিনি গার্ডদের সাথে কথা বলে জানান, গার্ডরা জানিয়েছেন তারা গুদাম থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখে অফিসে গিয়ে খবর দেন।

দমকল বিভাগের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠান আর গুদাম মালিকরা মিলে সকল অঘটন ঘটায়। তিনি জানান, ঘটনাস্থলে পৌছে তিনি ব্যাংকের গার্ডদের পাননি। শুনেছেন তারা নাকি পালিয়ে গেছে। বন্ধ গুদামে আগুন লাগা রহস্যজনক জানিয়ে তিনি বলেন, রোববারও দমকল বিভাগ কাজ করেছে, গুদাম ভেঙে পড়ায়  আর পাট না সরালে সব আগুন নিভানো যাবে না।

গ্রীন ডেল্টা ইনসুরেন্স খুলনার জোনাল হেড জাহাঙ্গির হোসেন আবেদ জানান এই গুদামের বিপরীতে তাদের ১৩ কোটি টাকার বীমা করা রয়েছে এককভাবে। বলেন সার্ভে রিপোর্ট হয়ে গেলেই ক্ষতিপূরণ পাবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান। তিনি আগুনে এবং পাট গুদামের খাতাপত্রের অনিয়ম থাকার কথা অস্বীকার করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.