আতাউর রহমান মিন্টু, গফরগাঁও (ময়মনসিংহ): গফরগাঁওয়ের কান্দিপাড়া গ্রামে জাকিয়া খাতুন (৩৫) নামে এক নারী খুন হয়েছেন। আজ বুধবার কান্দিপাড়া বাজারের কাছে উস্থি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পেছনে কলাবাগানে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়।
পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
জাকিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করে বলা হয়েছে, জাকিয়া খাতুনকে ওই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
জাকিয়ার স্বামী মো. শাহীদ ঢাকায় একটি গার্মেন্টসের কর্মী। জোনাকি ও রাব্বি নামে দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে এ দম্পতির।
স্বজনরা জানান, জাকিয়া দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। আরো দুটি সন্তান থাকায় লোকলজ্জার ভয়ে তিনি অস্বস্তিতে ছিলেন। শেষে তিনি গর্ভপাত করানোর সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য গত সোমবার পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে যান। এ সময় কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার রাজন দত্ত জাকিয়া খাতুনের কাছে গর্ভপাতের জন্য ছয় হাজার টাকা দাবি করেন। অনেক অনুনয়-বিনয়ের পর আড়াই হাজার টাকায় গর্ভপাত করতে রাজি হন রাজন দত্ত।
মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে ফোন করে মেডিকেল অফিসার রাজন দ্রুত টাকা নিয়ে জাকিয়াকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে বলেন। জাকিয়া সেখানে যাওয়ার জন্য ৩টায় বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।
রাতে তিনি বাড়ি ফিরে না আসায় পরিবারের লোকজন বিভিন্ন স্থানে জাকিয়াকে খোঁজাখুঁজি করে। কিন্তু জাকিয়াকে কোথাও খুঁজে পাননি তারা। পরে পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়।
জাকিয়ার মেয়ে জোনাকী আক্তার অভিযোগ করে বলেন, মা গর্ভপাত করানোর জন্য মঙ্গলবার বিকেলে ডাক্তার রাজন দত্তের কাছে যান। এরপর সন্ধ্যা ৭টার দিকে মায়ের মোবাইল ফোনে ফোন করে নাম্বারটি ব্যস্ত পাওয়া যায়। পরক্ষণেই আবারো ফোন দিলে মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
জোনাকী দাবি করেন, ওই ডাক্তার তার মাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যার পর ঘাড় মটকে ও বাঁ হাত ভেঙে পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পেছনের কলাবাগানে কলাপাতা ও কলাই গাছ দিয়ে লাশ ঢেকে রাখে।
উপসহকারী মেডিকেল অফিসার রাজন দত্ত হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বেলা ৩টার দিকে পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র তালাবদ্ধ করে আমি ময়মনসিংহ চলে যাই।
তবে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক আয়েশা খানম জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে রাজন দত্তসহ আমরা সকলেই পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র তালাবদ্ধ করে চলে আসি। সে সময় রাজন দত্ত পরিবার পকিল্পনা কেন্দ্র সংলগ্ন তার ভাড়া বাসায় চলে যান।
পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী মহিউদ্দিন বলেন, বুধবার সকাল ১০টার দিকে রাজন দত্ত আমাকে ফোন করে জানান, ভাই একটি দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। আমাদের পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের পিছনে এক মহিলার লাশ পাওয়া গেছে।
পাগলা থানার ওসি চান মিয়া জানান, জাকিয়া খাতুনের গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার বাঁ হাতের তিনটি আঙ্গুল কাটা রয়েছে। অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে লাশ ফেলে গেছে বলে পুলিশের ধারণা।