ছোট হাসপাতাল ঘিরে বড় স্বপ্ন দরিদ্রদের

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী): ‘আমাগো আর রোগে ভুইগ্যা ওষুধ না খাইয়া মরতে হইবে না। বাড়ির ধারে এ্যাহন আমাগো হাসপাতাল হইছে। পোয়াতি বউগো আর কষ্ট করতে হইবে না। বিনা টাহায় বাড়ির ধারেই ডাক্তার ও ওষুধ পামু।’

ষাটোর্ধ্ব আম্বিয়া বিবি এভাবে প্রকাশ করলেন তার উচ্ছ্বাসের কথাগুলো। মহীপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত সেরাজপুর গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন দেখতে এসে এসব কথা বলেন তিনি।

serajpur community clinic
নবনির্মিত সেরাজপুর কমিউনিটি ক্লিনিক।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে  কলাপাড়া শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে স্থাপিত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মাহাবুবুর রহমান তালুকদার। মহীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস সালাম আকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র এসএম রাকিবুল আহসান, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ, মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ নাসির উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান খান, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ আলীসহ অন্যরা।

সেরাজপুর, লতিফপুর ও নিজশিববাড়িয়া গ্রামের প্রায় দেড় হাজার পরিবার এতদিন চিকিৎসা বঞ্চিত ছিল। মহীপুর ইউনিয়নে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলেও সেখানে ডাক্তার না থাকায় অসুস্থ হলে তাদের প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে কলাপাড়া হাসপাতালে যেতে হতো। মঙ্গলবার উদ্বোধন হওয়ার পর শতশত নারী-পুরুষ ভীড় করেন কমিউনিটি ক্লিনিক দেখতে। খোঁজখবর নিচ্ছেন কখন, কোন দিন ডাক্তার থাকবে এখানে। কী কী ওষুধ পাওয়া যাবে।

দুই মেয়ের মা আলেয়া বেগম। বয়স মাত্র ২২। কিন্তু অপুষ্টি ও নানা রোগে অনেকটাই বুড়িয়ে গেছেন। একটি পুত্র সন্তানের আশা লালন করছেন তিনি। এখন তিনি সন্তান সম্ভবা। জানালেন,’হুনছি এইহানে (ক্লিনিকে) রোজ ডাক্তার থাকবে। মোর শরীলডা ভালা না। হাঁটতে কষ্ট হয়। দম পাই না। আর হাসপাতাল (কলাপাড়া হাসপাতাল) অনেক দূর। হেইয়ার লাইগ্যা ডাক্তার দ্যাহাইতে যাই নাই। আর অতো দূরে যামু, অনেক টাহা লাগে। হেইয়া কই পামু। দুইডা মাইয়া তো বাসায় বইয়াই হইছে। আল্লায়ই দ্যাখবে আমাগো। তয় এইহানে ডাক্তার থাকলে আর কষ্ট পাইতে হইবে না। এ্যাহন এইহানেই ডাক্তার দেহামু।’

জেলে ও বর্গা চাষি অধ্যুষিত এই গ্রামগুলোর অধিকাংশ মানুষই অস্বচ্ছল। অসুস্থ হলে গ্রাম্য ডাক্তার ও ফকির-কবিরাজের ওপর নির্ভর করে তারা। সেরাজপুর গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু হলে অবহেলিত স্বাস্থ্যসেবা পাবে এখানকার মানুষেরা।

সেরাজপুর গ্রামের একাধিক মানুষ জানান, এখানে এখনো বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই। ইটের রাস্তা। এ কারণে গর্ভবতী মায়েদের এখানে আনতে দুর্ভোগ পোহাতে হবে। তাই জরুরি ভিত্তিতে পাকা রাস্তা নির্মাণ ও বিদ্যুতের দাবি করেছেন তারা।

কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লোকমান হাকিম জানান, সেরাজপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন বিকাল তিনটা পর্যন্ত একজন কমিউনিটি হেলথ সার্ভিস প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) থাকবেন। এছাড়া স্বাস্থ্য সহকারী ও এফডব্লিউএ’র একজন করে কর্মী সপ্তাহে তিনদিন করে এখানে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করবেন। আর প্রতিমাসে একদিন একজন এমবিবিএস ডাক্তার ওইখানে গিয়ে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.