‌পিনটেলের গম মানুষের খাবার অনুপযোগী, খালাস না করার সিদ্ধান্ত

প্রতিনিধি, খুলনা: মংলা বন্দরে আমদানিকৃত গম খালাস তদারকি কমিটির সিদ্ধান্তের সাথে একমত পোষণ করেছে ঢাকার খাদ্য অধিদপ্তর।

এমভি পিনটেল জাহাজে ফ্রান্স থেকে আসা নিম্নমানের গম পরীক্ষার তদন্ত রিপোর্টে এই গম নিম্নমানের এবং মানুষের খাবারের অনুপযোগী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই গম মংলায় খালাস করা হবে না বলে বুধবার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে লিখিতভাবে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

অপরদিকে এমভি পিনটেল জাহাজে পচা ও নিম্নমানের গম আসার খবর মিডিয়ার কাছে প্রকাশ করায় খুলনার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ওপর নাখোশ হয়েছে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী নজরুল ইসলাম মঙ্গলবার দুপুরে কয়েকজন সাংবাদিককে কয়েক ঘন্টা বসিয়ে রেখেও তাদের সাথে কথা বলেননি। এই সময় তার দপ্তর হতে বলা হয়, মংলায় আগত পচা গমের ব্যাপারে কথা বলায় তিনি ‌ঊর্ধ্বতন মহলের রোষানলে পড়েছেন।

বুধবার এ প্রতিনিধি আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী নজরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, যেসব মিডিয়ার প্রতিনিধির সাথে তিনি কথা বলেননি, সেইসব পত্রিকায় তার বরাত দিয়ে যে খবর প্রকাশ হয়েছে তাতে তিনি বিব্রত।

তিনি জানান, এই কারণে কাউকে সাক্ষাৎ দিচ্ছেন না তিনি। তিনি এমভি পিনটেল জাহাজের আমদানিকৃত গম খালাসের ব্যাপারে আগের সিদ্ধান্ত বহাল আছে বলে জানান। তিনি জানান, তাদের সিদ্ধান্তের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নমুনা পরীক্ষায়ও একই রিপোর্ট এসেছে।

তিনি আবারও জানান, ফ্রান্স থেকে এমভি পিনটেলের ২১ হাজার ৫০০ টন আনা গম খালাস করা হবে না।

মংলা বন্দরে আমদানিকৃত গম খালাসের তদারকি কমিটির অন্যতম সদস্য কেমিস্ট একরামুল হক বুধবার বিকেলে এ প্রতিনিধিকে মুঠোফোনে জানান, তাদের সিদ্ধান্ত ঢাকায় নমুনা পরীক্ষার পরও বহাল রয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই গম খালাস করা হবে না।

এদিকে লিন্ডমন্ড শিপিং এজেন্ট খুলনাস্থ সহকারী ম্যানেজার সৈয়দ মুরতজা আলীর সাথে যোগাযোগ করে এমভি পিনটেল জাহাজে কবে গম বোঝাই করা হয়েছিল তা জানতে চাইলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে লাইন কেটে দেন। লিল্ডমন্ড শিপিং পরিচালক আক্তারুজ্জামনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি  বাইরে আছেন বলে জানান।

উল্লেখ্য সাইপ্রাসের পতাকাবাহী এমভি পিনটেল নামের জাহাজটিতে ৫/৬ মাস আগে ফ্রান্স থেকে ৫২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন গম বাংলাদেশে আসে। কিন্তু তখনই গম পরীক্ষায় নিম্নমানের হওয়ায় জাহাজ থেকে গম খালাস করা হয়নি। পরে জাহাজটি বহির্নোঙরে গিয়ে অবস্থান নেয়। এই সময় পচা গম নিয়ে তুমুল হৈচৈ শুরু এবং উচ্চ আদালতের রিটের কারণে এই গম আর খালাস করা হয়নি। গমের বাজার মূল্য প্রায় ৪৪ কোটি টাকা।

সম্প্রতি দুই বিদেশি খুন হবার পর চট্টগ্রামে অবস্থানরত খাদ্য অধিদপ্তরের বিদেশি বিশেষজ্ঞ ছুটি নিয়ে দেশে ফিরে যায়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঢাকার আমদানিকারক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইমপেস্ক কনসানটেল লিমিটেড প্রভাব বিস্তার আর অবৈধ সুবিধা দিয়ে পিনটেল জাহাজ চট্রগ্রাম বন্দরে পুনরায় ভিড়িয়ে ৩১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন গম খালাস করে। পরে জাহাজটি বাকি ২১ হাজার টন গম নিয়ে ১২ অক্টোবর মংলা বন্দরে ভিড়ে।

১৩ অক্টোবর মংলা বন্দরে আমদানিকৃত গম খালাস তদারকি কমিটির আট সদস্য জাহাজটির গম পরীক্ষা এবং নমুনা সংগ্রহ করে। এই কমিটি আমদানিকৃত গম নিম্নমানের ও পচা বলে অভিমত দিলেও ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশে গমের নমুনা ঢাকায় পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হয়।

সর্বশেষ সেই নমুনা পরীক্ষা করে  গমের মান নিম্ন এবং মানুষের খাবার অনুপযোগী বলে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। ফলে মংলা বন্দরে আগত ২১ হাজার টন গম আর খালাস হবার কোনো সম্ভাবনা নাই। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হওয়া ৩১ হাজার ৫০০ টন গম ইতোমধ্যে বাজারে চলে এসেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.