প্রতিনিধি, খুলনা: সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একটি গোষ্ঠী দেশে আইএস সংগঠনের অস্তিত্ব আছে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আসলে দেশে আইএস’র কোনো অস্তিত্ব নেই। যে দু’টি হত্যাকাণ্ডের পর আইএস’র দায় স্বীকার করে বার্তা এসেছে তা মেইড ইন টঙ্গী আর যাত্রাবাড়ীর। সোমবার দুপুরে খুলনা সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ এ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আইএস যে পোস্ট করে তা আন্তার্জাতিকভাবে। কিন্তু বাংলাদেশের দুই বিদেশী ঘটনার পর পোস্ট করা হয়েছে গাজীপুরের টঙ্গী আর ঢাকার যাত্রবাড়ি থেকে। এর পেছনে যারা আছে তারা আইএস’র নাম ভাঙ্গিয়ে ফায়দা লুটতে চায়। তাদের পাকড়াও করে জনগণের সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। তিনি আরও বলেন, সুদূরপ্রসারী চক্রান্তকারী গোষ্ঠী ২০১৩ এবং চলতি বছরের প্রথম তিন মাস দেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছিল। সে চক্রান্ত জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা প্রতিহত করেছি।
বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আল-হিকমা’ ও ‘হাজমা বিগ্রেড’ নামে দু’টি সংগঠনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৫৭ জন জেএমবি জঙ্গি এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংগঠনের ১০৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। লন্ডন ও ভারত থেকে আইএস’র নামে দু’টি দল বাংলাদেশে এসেছিল, তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে দেশে সক্রিয় আইএস’র অস্তিত্বের প্রমাণ মেলে না।
সাংবাদিকদের তিনি আরও বলেন, আইএস’র সাথে বাংলাদেশ সরকার বা জনগণের শত্রুতা নেই। বাংলাদেশে অস্থিতিশীল করে আইএস’র কোনো লাভ নেই। সিরিয়া ও ইরাকে আইএস মূলতঃ যোদ্ধা সংগ্রহ করে। সে ব্যাপারেও সরকার ও আইন-শৃংখলা বাহিনীর নজরদারি আছে।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, গত ছয় সপ্তাহের মধ্যে দেশে ৮টি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। তার মধ্যে দু’জন বিদেশি, দু’জন পুলিশ ও এক জন প্রকাশক রয়েছেন। নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। এতে জনমনে সৃষ্টি হওয়া ভীতি দূর করার লক্ষ্যেই বিভিন্ন স্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বৈঠক করেছে।
আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে গুলি করার অনুমতি দেওয়া প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আইনে স্পষ্ট বর্ণনা দেওয়া আছে। এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো গাফিলতি ও অবহেলার অভিযোগ উঠলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাম্প্রতিককালের চাঞ্চল্যকর ৮টি হত্যাকা-ের ঘটনা বাদ দিলে দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন সংক্রান্ত নিরাপত্তায় নতুন করে পরিকল্পনা করা হবে।
এ সময় খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুস সামাদ, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি এসএম মনির-উজ-জামান, কেএমপি কমিশনার নিবাস চন্দ্র মাঝি, র্যাব-৬ এর অধিনায়ক খোন্দকার রফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমানসহ র্যাব ও কেএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বেনজীর আহমেদ দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে খুলনাঞ্চলে র্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভাগীয় পর্যায়ের সমন্বিত কর্মপন্থা নির্ধারণে একই স্থানে মতবিনিময় সভা করেন।