প্রতিনিধি, রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এ কে এম শফিউল ইসলাম লিলন হত্যা মামলার চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ।
আজ বৃহস্পতিবার নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রেজাউস সাদিক চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
চার্জশিটে ১১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রেজাউস সাদিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, গত বছরের ১৫ নভেম্বর রাবি অধ্যাপক লিলন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এরপর মামলাটি তিনজন কর্মকর্তা তদন্ত করেছেন। বিভিন্ন সময়ে ১৮ জনকে পুলিশ ও র্যাব গ্রেফতার করেছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী এ হত্যাকাণ্ডটি ব্যক্তিগত ক্রোধের কারণে হয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত।
চার্জশিটে যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে তারা হলেন জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, আবদুস সামাদ পিন্টু, আরিফুল ইসলাম মানিক, সিরাজুল ইসলাম, সবুজ, আল মামুন, আরিফ, সাগর, জিন্নাত আলী, ইব্রাহিম খলিল ও নাসরিন আখতার রেশমাকে।
তদন্ত কর্মকর্তা আরো জানান, অভিযুক্তদের মধ্যে কেবল নাসরিন আকতার রেশমা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেফতার অন্যরা পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করলেও আদালতে গিয়ে জবানবন্দি দিতে অস্বীকার করেন। তবে সাক্ষ্য-প্রমাণে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের নামেই চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বলের ভূমিকা প্রসঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তা জানান, রাবি অধ্যাপক লিলনের সঙ্গে আগে থেকে বিরোধ ছিল আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বলের। এতে ওই শিক্ষকের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন উজ্জ্বল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দফতরের সহকারী সেকশন অফিসার নাসরিন আকতার রেশমার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছিলেন শিক্ষক লিলন। ফলে রেশমার স্বামী পিন্টু শিক্ষক লিলনকে ‘উচিত’ শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন। এই দুই ঘটনাকে মিলিয়ে উজ্জ্বল ও পিন্টু শিক্ষক লিলনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। অন্যদের মাধ্যমে ঘটনাটি ঘটনো হয়।
চার্জশিটে শতাধিক স্বাক্ষী থাকছে জানিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা আরো জানান, এ হত্যার সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ তারা পাননি। হত্যার দায় স্বীকার করে ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসটির মাধ্যমে একটি পক্ষ হত্যাকাণ্ডটি ভিন্ন দিকে নেওয়ার তৎপরতা চালিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৫ নভেম্বর বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন রাবির অধ্যাপক ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম লিলন। পরে বিকাল ৪টার দিকে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পর র্যাবের হাতে গ্রেফতার ছয়জন ও পুলিশের হাতে গ্রেফতার পাঁচজনসহ যুবদল ও জামায়াত-শিবিরের ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেওয়া হয়। বর্তমানে তারা কারাগারে আটক আছেন।
গত ৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেহেরচণ্ডি এলাকার এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে পিন্টুর স্ত্রী নাসরিন আকতার রেশমাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।