হাকিম বাবুল, শেরপুর: বাউল গানের মাধ্যমে গল্পাকারে বাল্যবিয়ে, যৌতুক ও নারী নির্যাতনের ভয়াবহতা তুলে ধরে সকলকে এর থেকে মুক্ত থাকার আহ্বান জানান বাউল শিল্পী মোজাফফর বয়াতি ও তার দল।
শুক্রবার বিকেলে তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত শেরপুর সদর উপজেলার পাকুরিয়া ইউনিয়নের পাকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বাউল গানের আসর বসে। ১৮ বছরের আগে বিয়ে নয়–এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নাগরিক সংগঠন ‘জনউদ্যোগ’ শেরপুর কমিটি বাল্যবিয়ে, যৌতুক ও নারী নির্যাতন রোধে সচেতনতামুলক বাউল গানের আয়োজন করে।
বাউল গান শুরুর আগে ‘জনউদ্যোগ’ শেরপুরের আহ্বায়ক অ্যধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এ আর এম ওয়াহিদুজ্জামান বাল্যবিয়ে সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রতিবেদনের ফলাফলের তথ্য তুলে ধরে বলেন, ১২ বছর বয়স হওয়ার আগেই আড়াই শতাংশ কন্যা শিশুর বিয়ে হয়। প্রায় ৬৫ শতাংশ শিশুর ১৫ বছর বয়সে কিংবা তারও আগে বিয়ে হয়। এমনকি ১০ বছরের আগেও কিছু কন্যা শিশুকে বিয়ে দেয়া হচ্ছে। বিয়ের সময় ৫৫ শতাংশ শিশুর মতামত নেয়া হয় না।
অনুষ্ঠানে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীম আরা বেগম বলেন, বাল্যবিয়ের কারণে শিশুদের শিক্ষা বাধাগ্রস্ত হয়, বিশেষ করে কন্যা শিশুদের। অপরিণত বয়সে বিয়ে হওয়ায় বাড়ছে মাতৃমৃত্যু, শিশু মৃত্যুর হার। এজন্য বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনাও বাড়ছে। যৌতুকের কারণে অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হচ্ছে। তাই সবাই মিলে বাল্যবিয়ে, যৌতুক ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। খুব শীঘ্রই শেরপুর সদর উপজেলাকে বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণা করার জন্য উপজেলা পরিষদের সভায় প্রস্তাব তোলা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
পাকুড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, সারাদেশের মধ্যে শেরপুর জেলা বাল্যবিয়ের অন্যতম একটি ঝুঁকিপূর্ণ জেলা। পাকুড়িয়া ইউনিয়নেই বাল্যবিয়ের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। সে কারণে জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা সবাইকে এখন থেকে শপথ থেকে নিতে হবে কোনো বাল্যবিয়ে কিংবা যৌতুকের বিয়েতে আমরা যাব না, দাওয়াত খাব না।
অনুষ্ঠানে শিক্ষবিদ ও শিশু সংগঠক শেরপুর সরকারি কলেজের অধ্যাপক শিব শংকর কারুয়া, সাংবাদিক সঞ্জিব চন্দ বিল্টু, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আনিসুর রহমান, সরকারি বালিকা শিশু পরিবারের তত্বাবধায়ক মো. বেলাল হোসেনসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।
বাউল গান শেষে জেলা তথ্য অফিস ‘বালিকা বধূ’ ও ‘পুতুল খেলার বয়স যখন’ নামের দুটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন করে।