হাকিম বাবুল, শেরপুর: একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমান এবং তার বাবাকে নৃশংস নির্যাতন ও গুলি করে হত্যার অভিযোগে কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক বাবুল চিশতির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার আমলি আদালতের বিচারিক হাকিম মুমিনুন্নিসা খানম আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।
২০০৯ সালে দায়ের হওয়া মামলাটি ঝিনাইগাতী আমলি আদালতে বিচারাধীন ছিল।
মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম শেরপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আখতারুজ্জামান।
বাবুল চিশতি ওরফে মাহবুবুল আলম বর্তমানে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক। তিনি ফারমার্স ব্যাংকের একজন উদ্যোক্তা পরিচালক।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাবুল চিশতি এবং তার সহযোগীরা আলবদর-রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন। তারা পাকবাহিনীর সহযোগী হিসেবে খুন-হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘর লুটতরাজে জড়িত ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ নবেম্বর বাবুল চিশতি এবং তার সহযোগীদের সহায়তায় ঝিনাইগাতী উপজেলার নাচুনমুহুরী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমানকে ধরে আহমদনগর পাকবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যা করা হয়। এর পর মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমানের বাবা কাংশা ইউনিয়নের তখনকার চেয়ারম্যান মো. মোখলেছুর রহমানকে বাবুল চিশতির নেতৃত্বে অপহরণ করা হয়। ছেলের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের কারণে তাকে ৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বকশীগঞ্জ উপজেলার গরুহাটি এলাকার বটগাছের সাথে বেঁধে হাত-পায়ে পেরেক ঢুকিয়ে নৃশংস নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যা করা হয়।
২০০৯ সালের ৫ জুলাই বাবুল চিশতিসহ ১৩ আলবদর-রাজাকারের নাম উল্লেখ করে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমানের ভাই হামিদুল ইসলাম মামলা দায়ের করেন। আদালত অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ প্রদান করেন। ১৩ জুলাই মামলাটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করে ১৪ জুলাই ঝিনাইগাতী থানার ওসি মামলাটি আদালতে পাঠান।
এদিকে, মামলা দায়েরে পর বাবুল চিশতি ২০০৯ সালের ২৪ আগস্ট হাইকোর্ট থেকে অন্তবর্তী জামিন নেন। পরবর্তীতে ২০১০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পুলিশ রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। এর মধ্যে বাবুল চিশতির পক্ষে মামলাটি কোয়াশমেন্টের আবেদনের কথা বলেন আইনজীবীরা। কিন্তু ২৯ ডিসেম্বর ধার্য তারিখে ঝিনাইগাতী আমলি আদালতের বিচারিক হাকিম মানবতাবিরোধী অপরাধের বিবেচনায় মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের আদেশ দেন।
সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম শেরপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আমরা মামলাটির পক্ষে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। বাবুল চিশতির একাত্তরে আলবদর থাকলেও তিনি নিজের অপকর্ম লুকিয়ে আজ মুক্তিযোদ্ধা সেজেছেন। তার অপরাধের অনেক সাক্ষী আছে। মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর হয়েছে। আশা করি এবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তে সব সত্য বেরিয়ে আসবে।