রবিউল হাসান রবিন, কাউখালী (পিরোজপুর): ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ভর্তি ফি কমানোর দাবিতে পিরোজপুরের কাউখালী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের তালা মেরে তিন ঘণ্টা আটকে রেখেছে কলেজ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা।
রোববার দুপুর ১২টা থেকে কলেজের প্রশাসনিক ভবনসহ মূল ফটকে তালা মেরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে। এ নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে দিনভর উত্তেজনা চলে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভর্তি কার্যক্রমসহ পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করে। ছাত্রলীগ নেতারা দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত ফি’র বাইরে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভর্তি ফি এর নামে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল। ফি কমানোর দাবি করলে অধ্যক্ষ তা আমলে নেননি। তবে কলেজ অধ্যক্ষ অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
কলেজ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, চলতি ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম গত ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়। প্রতিজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ভর্তি বাবদ এক হাজার ৮৫০ টাকা আদায় করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এতে রেজিস্ট্রেশন ফি, সেশনচার্জ ও দুই মাসের বেতন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ভর্তি ফি নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে শিক্ষার্থীদের সাথে কলেজ প্রশাসনের মত বিরোধের সৃষ্টি হয়। রোববার ভর্তির শেষ দিনে সকাল থেকে কলেজ ছাত্রলীগ নেতারা ভর্তি ফি ৫০০ টাকা করার দাবি তুলতে থাকে। কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের দাবি আমলে না নিলে এ নিয়ে শিক্ষকদের সাথে কথা কাটাকাটি চলে। দুপুর ১২টার দিকে ১৫-২০ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী বিক্ষোভ করে ভর্তিচ্ছু সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের বের করে দেয়। এসময় কলেজে বিশৃংখলার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায় বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা প্রশাসনিক ভবনের সব কক্ষে তালা মেরে দেয়। অধ্যক্ষসহ সকল শিক্ষকরা এসময় বের হয়ে একটি কক্ষে আশ্রয় নেন। এরপর শিক্ষকরা সেখানে জরুরি বৈঠক করে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানালে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা কলেজের মূল ফটকের কলাপসিপল গেটে তালা দিয়ে শিক্ষক কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করে রাখেন।
এসময় ছাত্রলীগ নেতারা কলেজের প্রধান ফটকে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ভর্তি ফি ৫০০ টাকা করার দাবি তোলে। এ সময় প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রিসাদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক রাজু তালুকদার ও যুগ্ম সম্পাদক মো. কামরুল খান প্রমুখ।
এ ঘটনায় কলেজে উত্তেজনা দেখা দিলে সাড়ে তিন ঘন্টা পর পুলিশ কলেজ ক্যাম্পাসে এসে পরিস্থিতি শান্ত করে। পুলিশের অনুরোধে ছাত্রলীগ নেতারা তালা খুলে দিলে অবরুদ্ধ শিক্ষকরা বের হয়ে আসেন।
ছাত্রলীগ সভাপতি মো. রিসাদ হোসেন হাওলাদার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত ভর্তি ফি উপেক্ষা করে কলেজ কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত অর্থ বাণিজ্য চালাচ্ছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত ফি এর বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কোনো কাগজপত্র দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করে। অতিরিক্ত ফি বাতিলের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করে। পরে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবন ও মূল ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
এ বিষয়ে কাউখালী কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক শহীদ সরোয়ার বলেন, ছাত্রলীগের কতিপয় নেতা অযৌক্তিকভাবে ভর্তি ফি ৫০০ টাকা করার দাবি তুলে কলেজে ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করে। এতে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধসহ পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।
অধ্যক্ষ মো. সাইয়েদুর রহমান ছাত্রলীগ অবরুদ্ধ হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ছাত্রলীগ নেতারা ডিগ্রি ভর্তি ফি অযৌক্তিকভাবে ৫০০ টাকার দাবি তুলে শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখে। এসময় ভর্তিচ্ছু সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের তারা বিতাড়ন করলে ভর্তির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।