স্কুল ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় ৩ বখাটেকে চড় দিয়ে ক্ষমা করে দিলো সালিশদাররা, অভিভাবকদের ক্ষোভ

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী): বিদ্যালয়ের সামনে প্রকাশ্যে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর (১৪) গায়ের ওড়না টেনে নিয়ে শ্লীলতাহানি করলেও রক্ষা পেয়ে গেল তিন বখাটে। ওই বখাটেদের শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার ছাত্রী-ছাত্রী ও শিক্ষকরা ক্লাসবর্জন করলেও শুক্রবার সালিশ বৈঠকে বখাটে রনি মুন্সী (১৬), প্রিন্স মুন্সী (১৯) ও হুমায়নকে (২০) কয়েকটি চড়-থাপ্পর দিয়ে তাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার চম্পাপুর ইউনিয়নের উত্তর পূর্ব পাটুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ শ্লীলতহানির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ অভিভাবক ও গ্রামবাসী এ সালিশকে লোক দেখানো দাবি করে বখাটেদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নেওয়া হলে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দেওয়াসহ অন্য স্কুলে ভর্তির আলটিমেটাম দেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার (২৭ এপ্রিল) সকালে স্কুলে আসার পথে ওই স্কুল ছাত্রীকে স্কুলের সামনেই ওড়না টেনে নিয়ে শ্লীলতাহানি করে চম্পাপুর ইউনিয়নের হারুন মুন্সীর ছেলে রনি, সোহেল মুন্সীর ছেলে প্রিন্স ও মোটরসাইকেল চালক হুমায়ন। ওই ছাত্রী এ ঘটনা শিক্ষক ও সহপাঠীদের জানালে বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে ছাত্র-শিক্ষকরা। বৃহস্পতিবার এ ঘটনায় ক্লাস বর্জন করে শিক্ষকরা উপজেলা প্রশাসনের কাছে নালিশ জানাতে আসার পথে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সালিশ বৈঠক করে ফয়সালার আশ্বাস দিলে তারা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ কর্মসূচি স্থগিত করে।

শুক্রবার বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শতশত মানুষের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠকে ওই তিন বখাটের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও প্রভাবশালী রনি ও প্রিন্সের অভিভাবকরা এ সালিশ না মেনে কয়েকটি চড়-থাপ্পর দিয়ে তাদের সন্তানদের নিয়ে যায়। এতে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে অভিভাবকরা। সালিশে চম্পাপুর ইউপি চেয়ারম্যান রিন্টু তালুকদার, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফজলুর রহমান তালুকদার, ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন মৃধা, ইউপি সদস্য কামাল হোসেন মৃধা, গফুর মোল্লা, যুবলীগ নেতা বশির তালুকদার, দুলাল গাজী উপস্থিত ছিলেন।

একাধিক অভিভাবক জানান, ওই বখাটেদের কারণে স্কুল ছাত্রীরা প্রতিদিনই হয়রানীর শিকার হচ্ছে। বখাটেদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে অনেক অভিভাবক স্কুলের গন্ডি না পেরোতেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। তাই বখাটেদের শাস্তি না হলে কোন স্কুল ছাত্রীই নিরাপদ নয়। তারা বখাটেদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত মেয়েদের স্কুলে পাঠাবেন না বলে জানান।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বজলুর রহমান জানান, ওই বখাটেদের কারণে তাদের ছাত্রীরা নিরাপদ নয়। সবাই  বখাটেদের  শাস্তি দাবি করলেও অভিভাবকরা শুধু কয়েকটি থাপ্পড় মেরেই এ ঘটনা ধামাচাপা দেয়।

চম্পাপুর ইউপি চেয়ারম্যান রিন্টু তালুকদার জানান, তারাও চেয়েছিলেন বখাটেদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কিন্তু সালিশে উপস্থিত কয়েকজন তাদের সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে শুধু কয়েকটি চড় দিয়েই ভবিষ্যতে বখাটেরা আর এ ধরনের কর্মকাণ্ড করবে না দাবি করে ছেড়ে দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.