রতন সিং, দিনাজপুর: দিনাজপুর জেলায় চিত্ত বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসন, ভালো ছবি নির্মাণ না হওয়া, হলের পরিবশেসহ নানা করণে জেলার ২৩টি সিনেমা হলের মধ্যে চালু রয়েছে মাত্র ৭টি। দর্শকশূন্যতার কারণে যে কোন সময় বাকি সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে। নতুন প্রজন্ম সিনেমা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় এ সব স্থানে এখন গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন ও বিপনি বিতান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দিনাজপুর জেলায় ২০০৩ সালেও সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল ২৩টি। এর মধ্যে এখন দর্শকশূন্যতার কারণে কোন রকম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে মাত্র ৭টি সিনেমা হল। দিনাজপুর শহরে ৫টি সিনেমা হলের মধ্যে ৪টি বন্ধ হয়ে গেছে। চালু রয়েছে শুধু মডার্ন সিনেমা হল। বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হলগুলো হলো বোস্তান, লিলি, চৌরঙ্গী ও বিজিবি পরিচালিত কুঠিবাড়ী সিনেমা হল।
এছাড়া চালু অন্য হলগুলো হলো বীরগঞ্জ উপজেলায় উল্লাস ও তাজমহল, ফুলবাড়ী উপজেলায় উবর্শী, পার্বতীপুর উপজেলায় উত্তরা টকিজ, বিরামপুর উপজেলায় অবসর সিনেমা হল, ঘোড়াঘাট উপজেরায় সোনালী সিনেমা হল।
দর্শকশূন্যতা ও এ ব্যবসায় মালিকদের ক্ষতিগ্রস্তের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া ১৬টি সিনেমা হলের মধ্যে রয়েছে ঘোড়াঘাট উপজেলায় জনতা (১) ও জনতা (২), হাকিমপুরে হীরামতি, সেতাবগঞ্জে আশা ও শাপলা, কাহারোলে উষা ও উল্লাস, বিরামপুরে পল্লবী ও ষ্টার, খানসামায় রওশন সিনেমা হল এবং বিরলে সাকি হল।
সিনেমা হলের স্থানে এখন বিপনী বিতান, আবাসিক ভবন ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। চিরিরবন্দর উপজেলার রানীরবন্দরে ১টি সিনেমা হল চালু করার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে অনুমতি নেওয়া হলেও ব্যবসায়ী মন্দার কারণে তাও বন্ধ হয়ে যায়। নতুন করে কেউ এই ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। ফলে জেলায় এক সময়ে হলগুলোতে যে রমরমা দর্শক ছিল তা এখন আর নেই। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি প্রচেষ্টা ও উদ্যোগসহ সকলরেই এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
এ ব্যাপারে জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সুলতান কামাল উদ্দীন বাচ্চু ও উদীচী জেলা শাখার সভাপতি আসাদুল্লাহ সরকারের সাথে কথা হলে তারা উভয়ই বলেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও অর্থায়নই একমাত্র সিনেমা শিল্পগুলোকেও বাঁচিয়ে রাখতে পারে। দর্শকদের চাহিদা ও কাহিনীভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করে দর্শকদের সিনেমা হলে নিয়ে যাওয়ার জন্য মানসম্পন্ন ছবি নির্মাণই একমাত্র পথ। এ জন্য পার্শ্ববর্তী দেশে শিল্পীদের অভিনয়ভিত্তিক ইন্সটিটিউট যেভাবে গড়ে উঠেছে ওই ধরনের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অভিনয় শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ছবি নির্মাণে মান উন্নয়ন ঘটতে পারে।
দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক গোলাম নবী দুলাল বলেন, ভালো সামাজিক ছবি নির্মাণ ও উন্নত অত্যাধুনিক সিনেমা হল নির্মাণ করে পরিবেশ সৃষ্টি করা হলেই দর্শকশূন্যতা কেটে যাবে।