রবিউল হাসান রবিন, (কাউখালী) পিরোজপুর: বিধবা মায়ের বাসা বাড়িতে কোরান শিক্ষা দিয়ে অর্জিত অর্থে লেখা পড়া করছে খাইরুন্নাহার। খাইরুন্নাহার পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা সদরের সরকারি এস.বি সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এবার এস.এস.সি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। খাইরুন্নাহার ২০১০ সালে কাউখালী সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়ে কাউখালী উপজেলার মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিল।
পরিবারের সদস্য ও শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পিরোজপুরের কাউখালী শহরের দক্ষিণ বাজারের বাসিন্দা সাহিদা বেগমের স্বামী মো. মোফাজ্জেল হোসেন ২০০৯ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর পরিবারের উপার্জনক্ষম আর কেউ না থাকায় বিধবা সাহিদা বেগম দুই মেয়েকে নিয়ে কষ্টে পড়েন। জীবিকা আর দুই মেধাবী মেয়ের লেখা পড়া চালিয়ে নিতে তাকে বাসা বাড়িতে শিশুদের কোরান শিক্ষা দিয়ে চলতে হচ্ছে। এমন টানাপোড়েন আর দুর্ভোগের জীবনে মা দুই মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে আসছেন।
মা সাহিদা বেগম বলেন, মেয়েটা কষ্ট করে লেখাপড়া করেছে, স্কুলের স্যারেরা ওকে সহযোগিতা করেছে বলেই ও ভাল ফল করেছে। আমি খুব আনন্দ পেয়েছি। এখন মেয়েটাকে একটা ভাল কলেজে পড়াতে চাই । কিন্তু আমার তো সে উপায় নাই।
খাইরুন্নাহার জানায়, মায়ের কষ্ট আর প্রিয় স্যারদের সহযোগিতায় যে ফল পেয়েছি তারে জন্য কৃতজ্ঞতা। মায়ের কষ্টের সংসারের অভাব দূর করতে চাই।
বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে কাজ করতে চাই। কেননা সুবিধা বঞ্চিত মেধাবী মেয়েরা বাল্য বিয়ের শিকার হয়ে শিক্ষা জীবন থেকে ঝড়ে পড়ছে। সহপাঠি অনেককেই ঝড়ে পড়তে দেখেছি। এই ব্যাধি দূর করতে চাই। খাইরুন আরও জানায়, সে চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়তে চায় । একজন সু চিকিৎসক হয়ে আর্ত পীড়িত মানুষের সেবা করতে চায়।
এ ব্যাপারের স্থানীয় শিক্ষানুরাগী আবদুল লতিফ খসরু বলেন, কামরুন্নাহারের এই ফলাফলের কথা শুনেই বাসায় গিয়ে সফল মা ও মেধাবী মেয়েকে ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়ে এসেছি। অদম্য কামরুন্নাহার এবং ওর মায়ের জয় হোক।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, খাইরুন্নাহা অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী। বিধবা মা অনেক কষ্টে লেখাপড়া করিয়েছে। খাইরুন্নাহার নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত ছিল। মনোযোগী হয়ে পড়াশুনা করায় ভাল ফল করেছে।