ঝিনাইদহে সেবায়েত ও শিয়া চিকিৎসক হত্যায় ২ শিবির নেতার স্বীকারোক্তি

জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুপুর-কাষ্টসাগরা গ্রামের রাধা-মদন-গোপাল মঠের সেবায়েত শ্যামানন্দ দাস ও কালীগঞ্জের শিয়া নেতা ডা: আব্দুর রাজ্জাক হত্যার দায় স্বীকার করে রোববার বিকেলে পৃথক পৃথক আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন দুই শিবির নেতা।

এরা হলেন জেলার শৈলকুপা উপজেলার ফুলহরি গ্রামের মো: আমিনুল ইসলামের ছেলে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা দক্ষিণ শাখার শিবিরের সাবেক সভাপতি শাহিন আলম শাহিন ও সদর উপজেলার মজারাজপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের মুহাম্মদ আলীর ছেলে সবুজ খান।

সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানিয়েছেন এসপি মো: আলতাফ হোসেন। তিনি জানান, আদালতে আসামিরা হত্যার দায় স্বীকার করেছে এবং সহযোগীদের নাম প্রকাশ করেছে।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: আজবাহার আলী শেখ, সার্কেল এএসপি গোপিনাথ কানজি লাল, কালীগঞ্জের ওসি আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এ হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে শিবির। জবানবন্দিতে ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় নির্দেশে এ দু’টি হত্যার ঘটনা ঘটনানো হয়েছে বলে জানান শাহিন আলম শাহিন ও সবুজ খান।

তারা বলেছেন, গত ১৪ মার্চ রাতে কালীগঞ্জ উপজেলার শহরের নিমতলা বাসস্ট্যান্ডের কাছে হোমিও ডাক্তার এলাকার শিয়া নেতা হাফেজ আব্দুর রাজ্জাককে খুন করা হয়। এ ঘটনায় কালীগঞ্জ উপজেলা শিবিরের ৮জন অংশ নেয়। সে আদালতে এ খুনে সাথে জড়িত আরো ৭ জনের নাম প্রকাশ করেছে । তার দেওয়া জবানবন্দি রেকর্ড করেন কালীগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জেষ্ঠ্য বিচারিক হাকিম মো: আলমগীর কবীর।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো জানান, অপর চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে জুলাই মাসের ১ তারিখে। এদিন সদর উপজেলার মধুপুর-কাষ্টসাগরা গ্রামের রাধা-মদন-গোপাল মঠের সেবায়েত শ্যামানন্দ দাসকে খুন করা হয়। এ ঘটনায় শিবির নেতা মো: আমিনুল ইসলাম এ হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে বলেছেন, গত ৩০ জুন দিবাগত ভোর রাতে কেন্দ্রীয় নির্দেশে শ্যামানন্দ দাসকে খুন করা হয়। এ খুনের ঘটনায় তার সঙ্গে অংশ নেয় আরো ৬ জন। তাদের নামও সে আদালতে বলেছেন।

ঝিনাইদহের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ফাহমিদা জাহাঙ্গীর তার দেওয়া জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন বলে জানানো হয় । জবানবন্দিতে সে উল্লেখ করেছে কীভাবে খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে তারা । আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে সে খুনের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান এসপি। শনিবার ১৬ জুলাই রাত ৩টার দিকে শৈলকুপা উপজেলা শেখপাড়ার একটি মসজিদ থেকে শাহিনকে ও কালীগঞ্জ উপজেলা শহরের ৩ নং ওয়ার্ডের সেক্রেটারি সবুজ খানকে ধরা একই দিন বিকেল ৩ টার দিকে। এমন তথ্য দিয়েছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো জানিয়েছেন, তাদের রোববার বিকেল ৪টার দিকে সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করা হয় এবং সন্ধ্যা ৬টার দিকে জবানবন্দি প্রদান করা শেষ করা হয়।

এছাড়া গত ৭ জুন নিহত সদর উপজেলার কোরতিপাড়ার পুরোহিত আনন্দ গোপাল হত্যার দায় স্বীকার করে গত ২১ জুন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে অপর শিবির নেতা এনামুল স্বীকার । এই নিয়ে চাঞ্চল্যকর তিন হত্যা মামলার মোটিভ ও ক্লু উদ্ধার করলো পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.