দরিদ্রদের বদলে স্বচ্ছলরা উপকারভোগী, ঝিনাইদহে খাদ্যবান্ধবের কার্ড নিয়ে বিস্তর অনিয়ম

জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ: খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের চালের কার্ড নিয়ে ঝিনাইদহে বিস্তর অনিয়ম চলছে। হতদরিদ্র পরিবারের বদলে অনেক স্বচ্ছল মানুষ এ কার্ড পেয়েছেন।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, দলীয় নেতা ও ডিলারদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের কার্যালয়ে।

বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে সংবাদ প্রকাশের পর সংশ্লিষ্টরা অনিয়ম তদন্তে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না।

গান্না ইউনিয়নের কালুহাটী পশ্চিমপাড়ার ঠান্ডু জোয়ারদারের ছেলে রিপন জোয়ারদার, ভুলি জোয়ারদারসহ একই বাড়ির তিনজন কার্ড পেয়েছেন। তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো বলে দাবি করেন ইউপি মেম্বার মাজেদুল হক। এখানকার অনেক দরিদ্র পরিবার কার্ড পায়নি।

কালুহাটী গ্রামের শফি বিশ্বাসের পরিবারে তিনটি কার্ড দেওয়া হয়েছে। একই গ্রামের ঠাকুর বিশ্বাস ও খোকন বিশ্বাসের অবস্থা স্বচ্ছল হলেও তারা কার্ড পেয়েছেন।

চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ট রিপন জোয়ারদার এসব কার্ড বিতরণ করেছেন। স্থানীয় মেম্বার এ বিষয়ে কিছু জানেন না।

ইউপি সদস্য আব্দুল হাকিম জানান, আমার কাছ থেকে কোনো তালিকা নেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগের কামরুল নামের একজন এই তালিকা করেছে। তবে চেয়ারম্যান নাসির মালিথা জানান, রোববার সব কার্ড প্রত্যাহার করা হয়েছে। জানা গেছে, এ ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের কয়েকটি কার্ড বাতিল করা হয়েছে।

ঝিনাইদহ সদরের সাধুহাটী ইউনিয়নের বংকিরা গ্রামের অস্বচ্ছল নাসির কোনো কার্ড পাননি। একই গ্রামের রুজ্জেল ও বাহার আলীর ছেলে রায়হান কার্ড পেয়েছেন।

সদরের কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের কনেজপুর গ্রামের স্বচ্ছল পরিবার সাবেক ইউপি মেম্বার ইমান আলী ও তার ভাই ইকরাম কার্ড পেয়েছেন। ইমান আলীর পানের বরজ আছে ও একটি মাইক্রোবাস রয়েছে। ইকরাম আলীর দুই ছেলে চাকরি করেন। অথচ তাদের বাড়ির পাশের দরিদ্র জবেদ আলী, মোয়াজ্জেম ও আলী কদর কার্ড পাননি।

কনেজপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম, রেখসোনা খাতুন ও জামাল হোসেনকে দলীয় বিবেচনায় কার্ড দেওয়া হয়েছে। এ সব সম্পন্ন পরিবারের বাড়ির পাশেই বাস করেন হতদরিদ্র রুহুল আমিন, সেকেন্দার আলী, তনজের, মনজের আলী ও জাহিদুলসহ অনেক গরিব মানুষ। স্থানীয় মেম্বর মখলেচুর রহমান লাল্টু তার ওয়ার্ডে ধনীদের কার্ড দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এ সব বিষয় তিনি কিছুই জানেন না।

এ সব বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অভিযোগ আসলেই সেটা বাতিল করা হচ্ছে। কার্ড নিয়ে কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.