শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশের জন্য সমন্বিত জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক: শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশের জন্য জাতীয়ভাবে সমন্বিত কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাঁরা বলেছেন, শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো প্রতিকারের জন্য প্রয়োজনীয় সেবার আওতায় আনার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারেন মা-বাবাসহ অভিভাবকরা।

সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ।

এজন্য মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে  অভিভাবকদের সচেতন, উদ্বুদ্ধ ও সাক্ষর করে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন তাঁরা। এটি করা হলে অভিভাবকরা শিশুদের মানসিক বিকাশের বাধাগুলো চিহ্নিত করতে পারবেন, মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পারবেন এবং সমস্যা অনুযায়ী শিশুদের সঙ্গে আচরণ করতে পারবেন । এছাড়া অভিভাবকরা প্রয়োজনে পরামর্শক ও চিকিৎসকদের সহায়তা নিতে পারবেন।

গণমাধ্যম ও যোগাযোগ উন্নয়ন সংগঠন সমষ্টি আয়োজিত শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশে অভিভাবকদের ভ‚মিকা শীর্ষক এক জাতীয় সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতব্য সংস্থা হিউম্যানিটি বিয়ন্ড ব্যারিয়ার্স-এর সহযোগিতায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সভাকক্ষে এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সমষ্টি’র নির্বাহী পরিচালক মীর মাসরুর জামান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে একুশে পদকপ্রাপ্ত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, শিশুদের সুস্থ-স্বাভাবিক-পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ জরুরি হলেও এটি সব মহলে তেমন গুরুত্ব পচ্ছে না। এজন্য নীতি-নির্ধারণী উদ্যোগ ও কর্মসূচি দরকার। শহরের পাশাপাশি গ্রামের শিশুদের জন্যও এরকম কর্মসূচি প্রয়োজন

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আরো বলেন, অভিভাবকরা অনেক সময় শিশুদের ওপর অযথা চাপ প্রয়োগ করেন, তাদের প্রতিযোগিতার দৌড়ে নামিয়ে দেন। এরকম চর্চা শিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং তাদের মানসিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তিনি বাবা-মাসহ অভিভাবকদের শিশুদের প্রতি সহনীয় আচরণ করার আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক আনজীর লিটন বলেন, শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশে সরকারিভাবে একটি জাতীয় রূপরেখা তৈরি করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত উদ্যোগ নেওয়া হবে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি অভিভাবক সাক্ষরতার কার্যক্রমটি আরো ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেবে। তিনি শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলাসহ অন্যান্য সৃজনশীল কাজে অংশগ্রহণ করার সুযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতি সাবেক সিনিয়র সচিব ও বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব জনাব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, পারিবারিকভাবে যেমন এখানে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তেমনি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্কুল-কলেজ থেকেও শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের পর্যবেক্ষণ জরুরি। এক্ষেত্রে সচেতনতা  ও সক্রিয়তা বাড়ানো একান্ত প্রয়োজন।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, শিশুদের বিশেষ করে কিশোর বয়সীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি একটি গুরুতর জাতীয় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট পরিচালিত জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপের তথ্য উল্লেখ করে এতে বলা হয়, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ (২ কোটি ৮০ লাখের বেশি) হালকা থেকে গুরুতর মানসিক অসুস্থতায় ভুগছে। এই জরিপ অনুযায়ী, ৭ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১৪ শতাংশ শিশুর মানসিক অসুস্থতা রয়েছে। এর মাঝে ৯৫ শতাংশই কোনো ধরনের পরামর্শ বা চিকিৎসার আওতায় আসে না। অভিভাবকরা শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিকে চিহ্নিতও করতে পারেন না। এ অবস্থা সমস্যাটিকে আরো প্রকট করে তোলে বলে প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

এরকম প্রেক্ষাপটে সমষ্টি গঞ্জনা ও বৈষম্য কমিয়ে শিশুদের সুস্থ বিকাশের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেয়। এর আওতায় ঢাকা, বরগুনা ও টাঙ্গাইলের ১০টি স্কুলের ৪০০ জন অভিভাবককে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য সাক্ষরতা সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

সেমিনারে বিষয় বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.