চলমান ছাত্র আন্দোলন, সহিংসতা ও সাংবাদিকতা

জাহিদুল হক খান

বাংলাদেশের সাংবাদিকরা যথেষ্টা সুরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে থাকেন না, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক সময় সাংবাদিকরা সহিংস আক্রমণের শিকার হন। গণমাধ্যম ও যোগাযোগ-বিষয়ক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান সমষ্টি বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলাসহ অন্যান্য হয়রানিমূলক ঘটনার তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও পরিস্থিতির উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের ভূমিকা জোরালো করার জন্য কাজ করছে।

সমষ্টি সাম্প্রতিক বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সৃষ্ট সহিংসতার সময় সাংবাদিকদের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে চেষ্টা করছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও বিভিন্ন জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, এ সহিংসতায় চারজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। তিনজন নারী সাংবাদিক শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন। এ সময়ে সাংবাদিক এবং আলোকচিত্র ও ভিডিও সাংবাদিকসহ দু’শ’র বেশি গণমাধ্যমকর্মী আহত হয়েছেন।

চার সাংবাদিক নিহত

নয়া দিগন্তের সিলেট প্রতিনিধি ও স্থানীয় দৈনিক জালালাবাদ পত্রিকায় সাংবাদিক এটিএম তুরাব ১৯ জুলাই শুক্রবার দায়িত্ব পালনের সময় গুলিতে নিহত হন। তিনি ১০ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত ছিলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৩২ বছর। পুরো পরিবার তাঁর আয়ের ওপর নির্ভরশীল।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে দায়িত্ব পালনকালে ১৮ই জুলাই বৃহস্পতিবার  গুলিতে নিহত হন ঢাকা টাইমস-এর সিনিয়র রিপোর্টার হাসান মেহেদি।

গাজীপুরের ভোরের আওয়াজ পত্রিকার প্রতিনিধি শাকিল হোসেন নিহত হন একই দিনে। তিনি ঢাকায় এসে সংঘর্ষের মধ্য পড়েন।

২০ জুলাই ঢাকায় গুলিতে নিহত হন অনলাইন পোর্টাল দি রিপোর্ট-এর ফটো সাংবাদিক তাহিদ জামান প্রিয়। ২১ জুলাই তাঁর নিজ জেলা রংপুরের নূরপুর কবরস্তানে তাঁকে দাফন করা হয়। তাঁর চার বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

শ্লীলতাহানির শিকার তিন নারী সাংবাদিক

নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় স্থানীয় অনলাইন দৈনিক সোজাসাপ্টা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার রেশমা শারীরিক নির্যাতন এবং শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন ২০ জুলাই শনিবার । গ্যাস লাইটার দিয়ে তাঁর চেহারায় আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং তাঁর পোশাক ছিঁড়ে ধর্ষণচেষ্টা চালানো হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। সে সময় তাঁর সঙ্গে আরো দুজন নারী সাংবাদিক ছিলেন, তাঁরাও আক্রমণের শিকার হন। তবে ওই সাংবাদিক তাঁর দু সঙ্গীর নাম প্রকাশ করতে চাননি।

দু শতাধিক সাংবাদিক আহত

আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট সহিংসতার সময় দু শতাধিক সাংবাদিক আহত হয়েছেন। রংপুরের সিনিয়র সাংবাদিক মেরিনা লাভলী জানান, ১৬ জুলাই মঙ্গলবার সময় টিভির ক্যামেরাপারসন তারিকুল ইসলাম ও রিপোর্টার রেদোয়ান হিমেল, বাংলাভিশনের ক্যামেরাপারসন শাহ নেওয়াজ জনি, ডিআরবি অনলাইনের ক্যামেরাপারসন আইনুল হক গুরুতর আহত হন। আরও ৫-৭ জন আঘাত পান বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।

সিলেটের সিনিয়র সাংবাদিক লিয়াকত শাহ ফরিদী জানান, সিলেটের সাংবাদিক মো: রুবেল (এটিএন নিউজ), নিনেন্দু তালুকদার (সিলেট ভিউ), মামুন হোসেন (খবরের কাগজ) গুরুতর আহত হয়েছেন্ ।

সিনিয়র সাংবাদিক হাসিবুর রহমান বিলু জানান, বগুড়ার শফিকুল ইসলাম (দৈনিক করোতোয়া), শাহিনুর রহমান মিনু (দৈনিক ইত্তেফাক) এবং মেহেরুন সুজন (যমুনা টিভি) গুরুতর আহত হয়েছেন।

শেরপুরের সিনিয়র সাংবাদিক হাকিম বাবুল জানান, নেত্রকোনার শামসুর রহমান ভূইয়া (প্রতিনিধি, দৈনিক জনতা), শেরপুরের দেবাশীষ সাহা রায় (প্রতিনিধি, দৈনিক প্রথম আলো), জাহিদুল ইসলাম খোকন (দৈনিক গণমুক্তি), জামালপুরের মেহেদি হাসান (দেশ টিভি), নঈম আলমগীর (দৈনিক পল্লীর আলো), শামীম হাসান (চ্যানেল এস), আল আমীন (এটিএন বাংলা), বেলাল হোসেন (চ্যানেল আই), সুমন আনসারী (একাত্তর টিভি), জাহিদুল ইসলাম নিরব (ডেইলি স্টার) এবং আলমগীর হোসেন (চ্যানেল টোয়ন্টিফোর), কিশোরগঞ্জের ভৈরবের তুহিন মোল্লা (এটিএন নিউজ) আহত হয়েছেন।

বরিশালের সিনিয়র সাংবাদিক স্বপন খন্দকার জানান, বরিশালের মুরাদ আহমেদ (ব্যুরো প্রধান, ইনডিপেনডেন্ট টিভি), আকতার ফারুক শাহিন (ব্যুরো প্রধান, যুগান্তর), শামীম আহম্মেদ (ফটো সাংবাদিক, যুগান্তর), কাওসার হোসেন (যমুনা টিভি), অর্পূব অপু (সময় টিভি), সাব্বির আহম্মেদ (ডিবিসি মাল্টিমিডিয়া), সিদ্দিক হোসেন (ফটো সাংবাদিক, ডিবিসি মাল্টিমিডিয়া), পারভেজ রাসেল (মাইটিভি), শফিক মুন্সি (দেশ টিভি) এবং পটুয়াখালীর ডিবিসি সংবাদদাতা মহিবুল্লাহ এবং অনলাইন মিডিয়ার গোপাল দাশ আহত হয়েছেন।

নোয়াখালীর সিনিয়র সাংবাদিক আবু নাছের মজ্ঞু জানান, মাওলা সুজন (দেশ টিভি), আবু নাসের মজ্ঞু (ইনডিপেডেন্ট টিভি), আবুল হাসনাত বাবুল (ডিবিসি), আকবর হোসেন সোহাগ (নিউজ টোয়েন্টিফোর), এআর আজাদ সোহেল (ভোরের আকাশ), সাদ্দাম হোসেন রকি (সময় টিভি) আহত হন।

সাতক্ষীরা থেকে সিনিয়র সাংবাদিক শহিদুল্লাহ কায়সার সুমন জানান, দৈনিক যুগান্তরের যশোর প্রতিনিধ হাসফিকুর রহমান পরাগ গুরুতর আহত হয়েছেন।

চট্টগ্রামের সিনিয়র সাংবাদিক চৌধুরী ফরিদ জানান, শাহ রেজা (দৈনিক পূর্বদেশ), রনি দত্ত (চ্যানেল টোয়েন্টিফোর), তৌহিদুল ইসলাম (গাজী টিভি), চৌধুরী ফরিদ (চ্যানেল আই), সাইদুল ইসলাম (কালবেলা), মো. সুমন (ক্যামেরাপারসন, কালবেলা, আজীম অনন (বণিক বার্তা) এবং বাসু দেব (গাজী টিভি) গুরুতর আহত হয়েছেন।

আহত অন্য সাংবাদিকদের তালিকা

ঢাকায় প্রথম আলোর সাজিদ হোসেন, খালেদ সরকার, সুমন ইউসুফ, মানবজমিনের জীবন আহম্মেদ, ডিবিসি নিউজের ফারহানা যুথি, আরটিভির তাইমুম হোসেন রায়হান ও স্বপন দেওয়ান, একাত্তর টিভির মিল্টন আনোয়ার, মোহনা টিভির হুমায়ুন কবির, রিয়াজ খান, একাত্তর টিভির নাদিয়া শারমীন, চ্যানেল আইয়ের প্রতিবেদক শাকের আদনান ও শহিদুল্লাহ রাজু ২২ জুলাই হামলার শিকার হন। তাদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং চালক আহত হন। একাত্তর টিভির ক্যামেরাপারসন কাউসার ও মাহমুদুল হাসান শিবলী আহত হন।

ডেইলি অবজারভার-এর ফটো সাংবাদিক কাজী আজিজুর রহমান সুমন ১৯ জুলাই পুরানা পল্টন মোড়ে ছররা গুলিতে আহত হয়েছেন। ১৮ জুলাই মিরপুরে এলোপাথাড়ি পিটুনির শিকার হন দৈনিক আমাদের সময়-এর ফটো সাংবাদিক মন্জুরুল ইসলাম বাবু। খবরের কাগজ-এর ফটো সাংবাদিক মাসুদ মিলন ১৯ জুলাই পুরানা পল্টন মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন।

কালের কণ্ঠের ফটো সাংবাদিক শেখ হাসান, মন্জু ও সজীব ঘোষ হেনস্তার শিকার হয়েছেন।

বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর ফটো সাংবাদিক রোহেত আলী রাজীব ধাওয়ায় সময় পড়ে গিয়ে আহত হয়। বাংলানিউজ-এর সিনিয়র ফটো সাংবাদিক জিএম মুজিবুর রহমান মারধরের শিকার হন। সাংবাদিক ইফাত শরিফ রামপুরায় বিটিভি ভবনের পাশে গলিতে রাবার বুলেটে আহত হন।

বিজনেস পোস্ট-এর রিপোর্টার জীবন আমীর এবং তাঁর সাথে থাকা ডেইলি স্টারের একজন সাংবাদিক আহত হন। এটিএন বাংলার রিপোর্টার আবুল হোসেনের ও তরিকুল ইসলাম সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আহত হন। রিপোর্টার মোস্তাফিজার রহমান ও ভিডিওগ্রাফার জুয়েল ১৮ জুলাই উত্তরা পূর্ব থানায় অবরুদ্ধ হয়ে ইট-পাটকেলে আহত হন। এশিয়ান টিভির আব্দুল বাতেন বিপ্লব ১৬ জুলাই পায়ে মারাত্মক আঘাত পান।

ভিডিও জার্নালিস্ট আব্দুস সাত্তার সামির ১৮ জুলাই ঢাকা কলেজের সামনে আহত হন। শাহবাগ চত্ত্বর-এর রিপোর্টার সাইফুল ইসলাম নয়ন ১৮ জুলাই টিএসসিতে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে আঘাত পান।

ভিডিও জার্নালিস্ট শহীদুল হক জীবন শাহবাগে মারধরের শিকার হন। নূর মোহাম্মদ ভূইয়া মহাখালী রেললাইনে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আহত হন। ভিডিও জার্নালিস্ট আবদুল লতিফ চৌধুরী ১৯ জুলাই বাইতুল মোকারমের সামনে সংঘর্ষে আহত হন।

ইট লেগে ভিডিও জার্নালিস্ট আবির হোসেনের হাত থেতলে যায়। রিপোর্টার এনাম মণ্ডল ১৭ জুলাই গায়েবানা জানাজার সংবাদ সংগ্রহের সময় বায়তুল মোকাররমের সামনে এবং ২০ জুলাই মধ্যবাড্ডা ব্যাপারি টাওয়ারের সামনে দু দফা আহত হন। বৈশাখী টেলিভিশনের ভিডিও জার্নালিস্ট মাহফুজুর রহমান ১৮ জুলাই মারধরের শিকার হন।

বৈশাখী টিভির রিপোর্টার এমডি সাজ্জাদুর রহমান ১৮ জুলাই মেরুল বাড্ডায় কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির সামনে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আহত হন। ক্যামেরাপার্সন মাহফুজ এবং ড্রাইভার সুজন মিঞাও সেখানে আহত হন। তাদের গাড়িতে থাকা জিনিসপত্র লুট করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ডিবিসির স্টাফ রিপোর্টার মোহাইমিনুল খান অপু, মোহন ইসলাম ও সিনিয়র রিপোর্টার মোস্তফা মাহবুব আহত হয়েছেন। ডিবিসি টেলিভিশনের প্রযোজনা সহকারী মর্তুজা নাসিরও আহত হন। এসএ টিভির ক্যামেরাপারসন সোহান আহত হন।

এখন টেলিভিশনের ভিডিও জার্নালিস্ট মোহাম্মদ তানিম আহম্মদকে মহাখালীতে ১৮ জুলাই পুলিশ ধাওয়া দিয়ে আটক করে। রিপোর্টার মাজহার ইমনকে এসকে টাওয়ারের মাটিতে ফেলে পেটানো হয়। গাড়ির ড্রাইভার রাশেদুল আলম হাফিজও এসময় আহত হন। বাংলাভিশন-এর ভিডিও জার্নালিস্ট লিটন খান, রিপোর্টার মামুন আব্দল্লাহ এবং সাইদুল ইসলাম ও ভিডিও জার্নালিস্ট শুভ খান আহত হন।

দেশ টিভির অনলাইন রিপোর্টার মোহাম্মদ খালিকুজ্জামান খালিদ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে অফিসে যাওয়ার পথে শান্তিনগরে আক্রান্ত হন। তাদের গাড়ি ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়।

দেশ টিভির রিপোর্টার জান্নাতুল ফেরদৌস মোহনা ১৮ জুলাই কর্ণফুলী গার্ডেন সিটির সামনে হামলার শিকার হন। তার চোখের উপরের পাতায় ৯টা সেলাই লেগেছে। পরদিন দেশ টিভির আরেকটা গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ড্রাইভার আশরাফুলকে মারধর করা হয়।

সময় টিভির ভিডিও জার্নালিস্ট রতনচন্দ্র মজুমদার গুরুতর আহত হন। ১৭ জুলাই আন্দোলনকারীরা তাকে বেধড়ক পিটুনি দেয়। তার মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হয়। ভিডিও জার্নালিস্ট শেখ মো. নুরুল ইসলাম বাইতুল মোকাররমে গায়েবানা জানাযার সময় আহত হন। রিপোর্টার ত্বোহা খান তামিম শাহবাগে টিয়ার শেলে আহত হন ও বাম পায়ে আঘাত পান। ভিডিও জার্নালিস্ট মো. শাহজাহান খান মহাখালীতে টিয়ারগ্যাসে আহত হন, ভিডিও জার্নালিস্ট সুমন সরকার শাহবাগে আহত হন। ভিডিও জার্নালিস্ট নিজাম উদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং পরদিন সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে আহত হন। ভিডিও জার্নালিস্ট সামসুল আরেফিন প্রিন্স ১৮ জুলাই শাহবাগে মারধরের শিকার হন।

ভিডিও জার্নালিস্ট সালাউদ্দিন আল মামুন ১৮ জুলাই শাহবাগে মারধরের শিকার হন।

আহত হয়েছেন দিনাজপুরের শিমুল, বগুড়ার শহীদুল ইসলাম ও হবিগঞ্জের শাওন গোপ।

মাই টিভির ভিডিও জার্নালিস্ট হাসান বিশ্বাস ১৮ জুলাই রামপুরায় বিটিভি ভবনের সামনে আহত হন। নিউজ টুয়েন্টিফোরের ভিডিও জার্নালিস্ট আরেফিন হোসেন ১৯ জুলাই বাইতুল মোকাররমের সামনে আহত হন। একই টিভির ভিডিও জার্নালিস্ট মোফাজ্জল হোসেন বাবলুকে টিএসসিতে এবং মোহাম্মদ মুরাদকে বসুন্ধরা গেটের সামনে গাড়ি থেকে নামিয়ে পেটানো হয় ও তাদের গাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়। রিপোর্টার জুবায়ের সানি, ভিডিও জার্নালিস্ট আবদুস সালাম রিপন এবং রিপোর্টার মাসুদ সুমন আঘাত পেয়েছেন।

ডিবিসি নিউজ-এর ভিডিও জার্নালিস্ট মেহেদি হাসান মিম, রফিকুল ইসলাম ও মাহমুদ আলী বাবলু, রিপোর্টার মাসুদুর রহমান পল্টনে, রিপোর্টার অপু মেরুল বাড্ডায় ও কাজী জাহিদ গুলশানে হামলার শিকার হন।

গুলশানে আরো আহ হন একুশে টিভির রিপোর্টার কামরুজ্জামান, মাহমুদ হাসান ভিডিও জার্নালিস্ট ওয়াসম খান ও ড্রাইভার সোহেল হাওলাদার ।

এসএ টিভির রিপোর্টার শাহ জামাল খান সৌরভ, কাওসার হামিদ, রিফাত শিশির, রহমতুল্লাহ, ইসমাইল সর্দার, ভিডিও জার্নালিস্ট জুয়েল হোসেন, ইসমাইল হোসেন বিপ্লব, ফারুক হোসেন, হারুন ও ইব্রাহিম খলিল আহত হন।

দৈনিক সমকাল-এর রিপোর্টার সাজ্জাদ মাহমুদ নয়ন, ফটো সাংবাদিক মামুনুর রশীদ, দৈনিক বাংলার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আব্দুর রহমান সারজিল ১৭ জুলাই রাতে গুলিবিদ্ধ হন।

ইন্ডিপেনডেন্ট টিভির ভিডিও জার্নালিস্ট সুব্রত কুমার গুপ্ত বিটিভি ভবনের সামনে কানে ও মাথায় আঘাত পান। একই টিভির মাহমুদুল হাসান পারভেজ ১৯ জুলাই মেরুল বাড্ডায় ইটের আঘাতে আহত হন। একাত্তর টিভির অনির্বাণ সাহা আহত হন । এ চ্যানেলের ভিডিও জার্নালিস্ট মাহমুদুল হাসান শিবলী, আবুল কাওসার ওয়ালিম উদ্দিন আহমেদ, মো. রিশাদ হাসান রাব্বি,   সৈয়দ রাশেদুল হাসান, রিপোর্টার পারভেজ নাদির রেজা ১৮ জুলাই সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় আহত হন।

কালের কন্ঠের সিনিয়র ফটোগ্রাফার মঞ্জুরুল করিমকে মারধর করে তার মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয় ও ক্যামেরা ভেঙে দেওয়া হয়। প্রথম আলোর ফটোসাংবাদিক আশরাফুল আলম টিটো আহত হন।

বাংলা ট্রিবিউন-এর ফটোসাংবাদিক মো. সাজ্জাদ হোসেন, আজকের পত্রিকার হাসন রাজা, বিজনেস স্টান্ডার্ড-এর রাজিব ধর ও ফোকাস বাংলার নাজমুল হক বাপ্পি আহত হন।

দৈনিক সময়ের আলো রিপোর্টার মো. আব্দুল হালিম ও ফটো সাংবাদিক শেখ ফেরদৌস আহমেদকে মারধর করা হয়।

বিজয় টিভির দীপু মালাকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল এলাকায় মারাত্মক আহত হন। কালের কন্ঠের ফটো সাংবাদিক লুৎফর রহমান উত্তরার আজমপুরে ছবি তোলার সময় ধস্তাধস্তিতে পড়ে আঘাত হন। ইত্তেফাকের ফটোসাংবাদিক আব্দুল গনি ২০ জুলাই রামপুরায় আঘাত পান। সারা বাংলার ফটোসাংবাদিক সুমিত আহমেদ সোহেল পায়ে আঘাত পান।

নয়া দিগন্তের ফটোসাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল বাপ্পি ও সমকালের নয়ন ২০ জুলাই আন্দোলনকারীর ঢিলের আঘাতে আহত হন। বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর ফটোসাংবাদিক রোহিত আলী রাজিব, দৈনিক খবরের কাগজ-এর মাসুদ পারভেজ মিলন, অবজারভার-এর এ আর সুমন দায়িত্ব পালনকালে স্প্লিন্টারের আঘাত পেয়েছেন।

দৈনিক জনকন্ঠ-এর ফটোসাংবাদিক প্রবীর দাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মাথায় আঘাত পান । ডেইলি স্টারের ফটোসাংবাদিক খালেদ সরকার আক্রমণের শিকার হন।

সমকাল-এর ফটোসাংবাদিক মামুনুর রশিদকে কাজীপাড়ায় লাঠিপেটা করা হয়। আজকের পত্রিকার ফটোসাংবাদিক ওমর ফারুক, দেশ রূপান্তর-এর মোশারফ হোসেন ভুবন একই এলাকায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আহত হন। এফএনএফ-এর ফটোসাংবাদিক সালাউদ্দিন আহমেদ শামীম ১৮ জুলাই মারধরের শিকার হন। ডয়েচে ভেলের হারুনুর রশীদ আহত হন। আহত হন দেশ টিভির রিপোর্টার জান্নাতুল মোহন ও ক্যামেরপারসন খালিদ সিদ্দিক। এনটিভির রিপোর্টার আহমেদ, এশিয়ান টিভির বাতেন বিপ্লব, প্রথম আলোর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল মামুন আহত হন।

আহত হন একাত্তর টিভির নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি বুলবুল ও দিনাজপুর প্রতিনিধি আরাফাত।

সুপারিশ

দুর্যোগ-সহিংসতা-সংঘাতময় পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য কিছু সুপারিশ প্রণয়ন করেছে সমষ্টি। সেগুলো হল:

১.  সাংবাদিকসহ সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিতদের নিরাপত্তার বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে সাংবাদিকদের সুরক্ষার নীতিমালা তৈরি ও বাস্তবায়ন করা।

২. নীতিমালা অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করা।

৩. নিরাপত্তা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষিত করা।

৪. সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক, শ্রমিক ও ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় ও সংলাপের ব্যবস্থা রাখা।

৫. সহিংস পরিস্থিতিতে সংবাদ সংগ্রহের জন্য সাংবাদিকসহ সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত সবার জন্য গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান করা।

৬. বিমা কাভারেজ নিশ্চিত করা।

৭. দ্রুততার সঙ্গে চিকিৎসাসহ অন্যান্য সহায়তা নিশ্চিত করা।

৮. সহিংস পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য সাংবাদিক সংগঠনগুলোর বিশেষ ব্যবস্থা রাখা: যেমন_ হটলাইন, চিকিৎসা ইত্যাদি।

৯. হাসপাতালগুলোতে সাংবাদিকদের জন্য বিনামূল্যে/সাশ্রয়ী মূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা।

 

জাহিদুল হক খান, কর্মসূচি সমন্বয়ক, সমষ্টি।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.