শরণখোলায় কলেজ শিক্ষককে পুলিশের মারপিটঃ থানা ঘেরাও, বিক্ষোভ

বাগেরহাট থেকে বাবুল সরদার: বাগেরহাটের শরণখোলার রায়েন্দা বাজারের ব্যবসায়ী ও তাফালবাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজের কম্পিউটার বিভাগের শিক্ষক আরিফ হোসেন দুলাল (৩৮), তার স্ত্রী শাহানা বেগম (৩২) ও ছেলে লিপুকে (১৪) পুলিশী নির্যাতনের ঘটনায় সেখানে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ক্ষুদ্ধ জনতা রবিবার রাতে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন।

Bagerhat Photo-2 (06-04-15).
শিক্ষক আরিফ হোসেনকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে

অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার ও বিচারের দাবিতে সোমবার সকাল থেকে উপজেলার সদর রায়েন্দা বাজারের সমস্ত দোকানপাট, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা বন্ধ করে দিয়েছে ব্যবসায়ী ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। উত্তেজিত জনতা নির্যাতনকারী থানার এসআই মাহবুব হোসেনের কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে বিক্ষোভ করেছেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি মিলনায়তনে এদিন এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।

আহত শিক্ষকের পরিবারের অভিযোগ, গত ৩ বছর আগে আরিফ হোসেন দুলাল স্থানীয় বাসিন্দা কালাম ফরেষ্টারের কাছ থেকে ৫শতক জমি কিনে সেখানে ঘর তুলে বসবাস করতে থাকেন। কিন্তু কালাম ফরেস্টার ওই জমি তার বলে দাবি করেন। এ নিয়ে আদালতে মামলা হলে তার রায়ও ওই শিক্ষকের পক্ষে যায়। রবিবার আরিফ সেখানে বিল্ডিংয়ের কাজ শুরু করলে কালাম ফরেস্টার পুলিশ নিয়ে বাধা দেন। এতে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হলে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরিফ জানান, পুলিশ তার ঘরের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে আসবাবপত্র ভাঙচুর এবং তাদেরকে হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায়। পরে থানায় নিয়েও তাকে ও তার স্ত্রী-পুত্রকে আবারও মারধর করে পুলিশ। খবর পেয়ে ইউএনও মোহাম্মদ অতুল মন্ডল থানা থেকে তাদের এনে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

থানার ওসি মো. রেজাউল করিম জানিয়েছেন, পাঁচরাস্তা এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ ওরফে কালাম ফরেস্টারের অভিযোগের ভিত্তিতে এস আই মাহবুবসহ পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে ওই শিক্ষক পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে এস আই মাহবুব হোসেন আহত হন। তিনি এখন শরণখোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পেশাগত কাজে বাধা দেওয়ায় তাদেরকে আটক করা হয়।

Bagerhat Photo-3 (06-4-15).
ক্ষুদ্ধ জনতা রবিবার রাতে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ইউপি সদস্য আকলিমা বেগম, স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার খান, শিরিন বেগম ও সেতারা বেগম জানান, পুলিশ অমানবিক নির্যাতন করেছে। আরিফের পিতা মুক্তিযোদ্ধা সাইয়েদুর রহমান হাওলাদার বলেন, কোনো মামলা বা অভিযোগ ছাড়াই পুলিশ এই নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়েছে। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার করা না হলে তিনি প্রকাশ্যে আত্মহত্যা করবেন বলে উল্লেখ করেন।

ইউএনও মোহাম্মদ অতুল মন্ডল জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে এবং আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অসীম কুমার সমদ্দার জানান, আরিফের ডান হাত ও বাম পা ভেঙেছে মনে হওয়ায় এক্স-রে করতে বলা  হয়েছে। এছাড়া তার শরীরের বিভিন্ন স্থানেও গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

এ ব্যাপরে শরণখোলা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহম্মেদ জানান, ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার করা না হলে শরণখোলার সকল স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ থাকবে। ব্যবসায়ীরাও একই কথা বলেন।

এ বিষয় বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মোঃ নিজামুল হক মোল্যা বলেন, বিষয়টি অনাকাঙ্খিত এবং দু:খজনক। তবে তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।