রতন সিং, দিনাজপুর: দিনাজপুরের অপহৃত শিশু মাহফুজা আখতার মিমির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। অপহরণের ছয়দিন পর আজ (শুক্রবার) সকাল ৮টায় বাড়ির কাছের একটি মজাপুকুর থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় আট বছরের শিশুটির লাশ পাওয়া যায়।
কাগজ কুড়ানো এক টোকাই বস্তার মুখ খুলে লাশ দেখতে পেয়ে চিৎকার করলে এলাকার লোকজন জড়ো হয়। পরে পুলিশে খবর দেয়া হয়।
মিমির মৃতদেহ ছিল অর্ধগলিত। পরনের পোশাক দেখে তার বাবা-মা লাশ শনাক্ত করেন।
দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্তের পর মিমির মৃতদের দুপুরে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
মিমির সৎমা আরজিনা বেগম ও তার খালু তানজিমুল ইসলামসহ পাঁচজনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।
অপহরণকারীরা তিনটি মোবাইল নাম্বার থেকে ফোন করে মিমির মু্ক্তিপণের জন্য দুই দিন ধরে দরকষাকষি করেছিল। মিমির বাবা তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি পুলিশ ও র্যাবের নজরে আনলেও তাদের পক্ষ থেকে মিমিকে উদ্ধারের কার্যকর কোনো তৎপরতা ছিল না বলে অভিযোগ করেন তারা। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল ‘চেষ্টা’ চলছে, আর র্যাবের পক্ষ থেকে নির্বাচনের ‘ব্যস্ততা’র পর মিমিকে উদ্ধারের আশ্বাস দেয়া হয়।
মিমির বাবা উপশহর ৭/এ ব্লকের বাসিন্দা ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি মাহবুবুর রহমান ও মা কামরুন নাহার জানান, ২৭ ডিসেম্বর রোববার সকালে বাড়ির সামনে খেলার সময় মিমি নিখোঁজ হয়। দুপুরে বাসায় না ফেরায় বিকেলে এলাকায় মাইকিং করা হয়। সন্ধ্যা পৌনে ৮টায় ০১৭৬২৮৭৩৬৯৪ নম্বর থেকে মাহবুবের মোবাইলে মিমিকে ফেরত পেতে ৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
মাহবুব আরো জানান, তিনি কোতয়ালী থানায় এসে উল্লেখিত মোবাইল নম্বরসহ অপহরণ মামলা দায়ের করেন। পরদিন ২৮ ডিসেম্বর ০১৭৬২৮৭৩৭৩১ নম্বর থেকে প্রথমে ৬ লাখ ও পরে ৫ লাখ টাকার মুক্তিপণ চেয়ে একাধিকবার ফোন করা হয়। মাহবুব ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বরের মোবাইল নম্বরগুলোসহ কোতয়ালী পুলিশ ও র্যাব-১৩ এর দিনাজপুর ক্যাম্পের সাথে যোগাযোগ করেন।
২৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় ০১৭৬২৮৭৩৭৩১ নম্বর থেকে মোবাইল করে মুক্তিপণ হিসেবে ৪ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। টাকা না দিলে তার শিশু কন্যাকে হত্যারও হুমকি দেয়া হয়। মাহবুব এব্যাপারে কোতয়ালী থানার ওসি একেএম খালেকুজ্জামানের সাথে দেখা করলে ওসি জানান, তারা মিমকে উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিচলিত না হওয়ার জন্য বলা হয় মাহবুবকে।
র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, তারা নির্বাচনী কাজ-কর্ম নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। নির্বাচন হওয়ার পর বিষয়টি তারা দেখবেন বলে আশ্বাস দেন মাহবুবকে।
মিমির পিতা-মাতাসহ স্বজন ও এলাকাবাসী জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাসময়ে পদক্ষেপ নিলে মেয়েটিকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হতো।
মিমির সৎমা আরজিনা বেগম ও তার খালু তানজিমুল ইসলামকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। এই ঘটনায় পুলিশ আরো তিনজনকে আটক করেছে বলে ওসি খালেকুজ্জামান জানান।
মিমির বাবা মাহবুবুর রহমান হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
মিমির হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে তার বাড়িসহ মর্গে অসংখ্য মানুষ মিমির বাবাকে সহানুভূতি জানাতে ভীড় করে।