পরলোকে শেখ তৈয়বুর রহমান

প্রতিনিধি, খুলনা: খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেখ তৈয়বুর রহমান মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি… রাজিউন)।

শুক্রবার (১ জানুয়ারি) রাত ১১টায় নগরীর নার্গিস মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে তিনি হাসপাতালে  চিকিৎসাধীন ছিলেন।

তিনি স্ত্রী লায়লা রহমানসহ তিন কন্যা ও এক পুত্রসহ বহু গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

Former Meyor KCC
শেখ তৈয়বুর রহমান (১৯৩৬-২০১৬)।

তৈয়বুর রহমানের মৃত্যুর খবর পেয়ে রাজনীতিক, সাংবাদিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা হাসপাতাল ও নগরীর কয়লাঘাট রোডের বাসভবনে ছুটে যান।

মরহুমের লাশ বৃহস্পতিবার সকালে নিজ বাসভবন নগরীর গগন বাবু রোডস্থ মতি মঞ্জিল থেকে শহীদ হাদিস পার্কে নেওয়া হয়। সেখানে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ, খুলনা জেলা ও মহানগর আওয়াম লীগ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র,খু লনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি, খুলনা সিটি কর্পোরেশন কর্মচারী ইউনিয়ন, জেলা আইনজীজবী সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন পুষ্পমাল্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

পরে বেলা ১১টায় খুলনা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

funeral service-sheikh taybur rahman
শহীদ হাদিস পার্কে জানাযা।

এরপর শহীদ হাদিস পার্কে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বাদ জোহর নগরীর গগণ বাবু রোডে মরহুমের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

তার মৃতদেহ খুলনা মেডিকেল কলেজের হিমঘরে রাখা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় মরহুমের তিন কন্যা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসার পর মঙ্গলবার বাগেরহাট সদরের কররী গ্রামে পারিবারিক কবর স্থানে তাকে সমাহিত করা হবে।

জীবন বৃত্তান্ত
তৈয়বুর রহমান ১৯৩৬ সালের ২১ অক্টোবর তিনি বাগেরহাট সদরের কররী গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম শেখ মতিউর রহমান। মাতা মরহুমা সাহিদা খাতুন।

বাগেরহাট জেলা সদরের মধুদিয়া ইচ্ছাময়ী হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ, বাগেরহাট পি.সি. কলেজ থেকে বি.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালে এল.এল.বি. ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৫৮ সাল থেকে তিনি নিজ গ্রামের মধুদিয়া ইচ্ছাময়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুই বছর বিনা বেতনে শিক্ষকতা করেন এবং স্কুলটিকে উন্নতির পথে নিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেন।

১৯৬৪ সাল থেকে ঐ স্কুলের কখনও সম্পাদক, সহ-সভাপতি ছিলেন। পরে সভাপতি হন এবং আমৃত্যু পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

১৯৬৩ সালে খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতিতে যোগদান করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি ন্যাপের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন এবং খুলনা জেলার সভাপতি ছিলেন।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

১৯৭৮ সালে তিনি খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন।

১৯৭৮ সালে গ্রামীণ কৃষকের উন্নতির জন্য কররী কৃষি ও মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি গঠন করেন এবং এই সমিতির তিনি প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন।

১৯৭৯ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী সমিতিতে যোগদান করেন।
তিনি বাংলাদেশের একজন প্রতিনিধি হিসেবে ১৯৭৯ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৩৪তম অধিবেশনে যোগদান করেন।

১৯৮৮ সালে খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯৮০ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রদূত হিসেবে সেনেগাল ও তৎসহ মালি, মৌরতানিয়া, আইভরিকোষ্ট, সিয়েরালিয়ন, গিনি কোনাক্রী এবং গাম্বিয়ার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন।

রাষ্ট্রদূত থাকাকালীন তিন বছর কৃতিত্বের সাথে কূটনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য সেনেগালের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক স্বীকৃতি স্বরূপ স্বর্ণপদকে ভূষিত হন।

তিনি বহু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত ও মেয়র হিসেবে যোগদান করেন।

তৈয়বুর রহমান টানা তিনবার খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) নির্বাচিত মেয়র হিসেবে (১৭ বছর ১০ মাস) দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালের ২২শে মে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং ২ বছর ৭ মাস দায়িত্ব পালন করেন।
পুনরায় তিনি সরাসরি ভোটে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন এবং ১০ মার্চ ১৯৯৪ ইং তারিখে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

পরবর্তীতে ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং বিপুল ভোটের ব্যবধানে পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হন। ৫ মে ২০০২ তারিখে তিনি তৃতীয়বারের মত খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠনের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি খুলনা জেলা ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি ছিলেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পূর্বে তিনি সংগঠিত ফ্রন্টের চেয়ারম্যান ছিলেন।
বঞ্চিত খুলনাবাসীর উন্নয়নের জন্য গঠিত খুলনা জেলা নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি। বহু সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।

বিভিন্ন  মহলের শোক

শেখ তৈয়বুর রহমানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম নুরুল ইসলাম দাদুভাই, মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু , জেলা সভাপতি অধ্যাপক মাজিদুল ইসলাম, মহানগর সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, জেলা সাধারণ সম্পাদক এসএম শফিকুল আলম মনা, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. আনিছুর রহমান বিশ্বাষসহ প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরবৃন্দ,বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামানসহ বিএনপি,যুবদল,ছাত্রদল,শ্রমিকদল,স্বেচ্ছাসেবকদল,মহিলাদলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

অনুরূপ বিবৃতি দিয়েছেন দখিনার সভাপতি আলহাজ্ব অধ্যক্ষ আলী আহমেদ, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও পাইকগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা স. ম. বাবর আলী এ্যাডভোকেট, সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ মো. আবু বকর সিদ্দিক, সহ-সভাপতি এ্যাড. হেমন্ত কুমার সরকার, সহ-সভাপতি প্রকৌশলী মো. আমজাদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী রফিকুল আলম সরদার, সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম মঈন উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক এ্যাড. আরাফাত হোসেন প্রমুখ।

সোহরাব হোসেন
খুলনা।
০২-০১-১৬
মোবাইল ঃ ০১৮১৯-৬৯৪০১৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.