আমিনা বিলকিস ময়না, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলের ধর্মঘটী শ্রমিক ও মিলের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নিজ নিজ অবস্থানে অনড় রয়েছেন। শ্রমিক আন্দোলনের তৃতীয় দিনেও মিছিল-মিটিংয়ে উত্তাল ছিল সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়ক ও মিল এলাকা।
শ্রমিকনেতা মনিরুল ইসলাম বলেন, মজুরি বাড়ানোর দাবিতে তারা ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছেন। শ্রমিক ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে মিলটি। কাজে যোগ না দিয়ে বুধবার সকালেও মিলের প্রধান ফটকে অবস্থান নেয় সাড়ে তিনশ’ শ্রমিক। পরে তারা ধর্মঘটের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করে সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কে। বিকালে মিল গেটে সমাবেশের আয়োজন করে।
মিলে দীর্ঘদিন কর্মরত শ্রমিক শামসুর রহমান জানান, ১৯৮০ সালে সাতক্ষীরা শহরের উপকন্ঠে ৩৩ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠা লাভ করার পর থেকেই সাতক্ষীরার ঐতিহ্যবাহী সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চলে আসছিল। কিন্তু ১৯৯২ সালে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এর পরামর্শে দেশের লাভজনক ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো যখন বিরাষ্ট্রীয়করণ শুরু হয় তখন তার কবলে পড়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠান সুন্দরবন টেক্সটাইল মিল। সেই শনি যেন ছাড়ছেই না, সংকটের পর সংকটে পড়েছে এই মিলের শ্রমিকরা। ন্যূনতম তিনশ’ টাকা মজুরিসহ সাত দফা দাবি নিয়ে সর্বশেষ সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে নেমেছে এ মিলের শ্রমিকরা। আন্দোলনে থাকলেও তিনদিনে সমস্যার সমাধান হয়নি, শ্রমিক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
শ্রমিক নেত্রী ও আন্দোলনের সংগঠক রেক্সনা সুলতানা বলেন, ১৯৯২ সালে মিল বন্ধ হয়ে গেলে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশনের (বিটিএমসি) তদারকিতে সার্ভিস চার্জের ভিত্তিতে পুনরায় চালু হয়। ২০০৭ সালে ফের বন্ধ হয়ে গেলে সহস্রাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে। ২০১০ সালে আবার চালু হলে ৮৫০ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। কিন্তু মজুরি বৈষম্য ও অব্যবস্থাপনার কারণে শ্রমিকের সংখ্যা ৩৫০ এ নেমে এসেছে। তারপরও তাদের মজুরি ১২০-১৪০ টাকার বেশি হয়নি। তাই এখানকার শ্রমিকরা ন্যূনতম ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে অনির্দিষ্টকালের শ্রমিক ধর্মঘটে নেমেছে।
মজুরি আন্দোলনের আরেক সংগঠক আনোয়ারা খাতুন জানান, আন্দোলনরত শ্রমিকদের অভিযোগ- দিনপ্রতি ১১০ থেকে সর্বোচ্চ ১৪০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়। এ নিয়ে গত এক বছর যাবত মিল কর্তৃপক্ষের কাছে মজুরি বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবি জানিয়ে আসছে তারা। কিন্তু তাদের কথায় কর্ণপাত করছে না মিল কর্তৃপক্ষ। এতে বাধ্য হয়ে রাজপথে নামতে হয়েছে তাদের। মিলের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে এ সমস্য সমাধানের পথে এগিয়ে যেতে পারতো।
মিল কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মিলটি চলছে সার্ভিস চার্জের ভিত্তিতে। বিভিন্ন মিল থেকেও মজুরি বৃদ্ধির দাবি উঠছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানে। এটি বিটিএমসির বিষয়, মিল কর্তৃপক্ষের কিছু করার নেই। সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলের মহাব্যবস্থাপক আবু হানিফ আরও বলেন, তিনি আসার পরে ১৪০ টাকার মজুরি কার্যকর হয়েছে। আগে আরও দশ টাকা কম ছিল।
বুধবার বিকেলে মিল গেটে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আন্দোলনরত গরিব শ্রমিকরা আন্দোলন করতে যেয়ে প্রতিদিনের ন্যূনতম মজুরি ১৪০ টাকা থেকেও বঞ্চিত হয়ে মানবেতর অবস্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে সরকার দ্রুত হস্তক্ষেপ করে বিষয়টির সমাধান করে মিলের স্বাভাবিক উৎপাদন অব্যাহত রাখবে এবং শ্রমিকদের মজুরি সমস্যার সমাধান ঘটাবে।
গেট সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রেক্সনা খাতুন। বক্তব্য রাখেন মনিরুল ইসলাম, জাকির হোসেন, আনোয়ারা বেগম, ফারুক হোসেন, গুরুপদ সরকার, তৌফিকুল ইসলাম, পবিত্র মন্ডল, খালেদা বেগম, মাসুম প্রমুখ।