আজিজুল ইসলাম, মৌলভীবাজার: সদ্য প্রায়ত সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর আসন মৌলভীবাজার-৩ (সদর-রাজনগর)-এ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৮ ডিসেম্বর এ আসনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বলে নির্বাচন কমিশন বৃহস্পতিবার ঘোষণা দিয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই প্রায় এক ডজন প্রার্থী সরগরম করেছেন নির্বাচনী মাঠ।

উপ-নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যানার-বিলবোর্ড আর ফেস্টুনের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ঝড় তুলছেন, আবার কারও সমর্থকরা মোটরসাইকেলের মহড়া দিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে সাধারণ ভোটারের দৃষ্টিতে আনার চেষ্টা করছেন। গ্রামের চায়ের দোকান থেকে অফিস পাড়া সব জায়গায় একই আলোচনা-“কে ধরছেন নৌকার পাল” অর্থাৎ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রার্থীক নিয়ে কে মাঠে আসছেন।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এই নির্বাচনে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা না থাকলেও নির্বাচনী মাঠে উত্তাপের কমতি নেই। এ পর্যন্ত এই আসনে শুধু আওয়ামী লীগেরই সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা এক ডজন। জাতীয় পার্টিও আসনটি চাইতে পারে। এই আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী নিয়ে বিপাকে পড়তে পারে দলের হাইকমান্ড। এমনকি এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের চলমান বিভক্তি আরও বাড়তে পারে বলে স্থানীয়দের ধারণা।
জানা গেছে, সাবেক হুইপ মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের প্রশাসক প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুর রহমান, প্রয়াত মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী ও জেলা সভাপতি সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদের নেতৃত্বাধীন তিনটি ধারায় বিভক্ত এখানকার আওয়ামী লীগ। জেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনেও এর প্রভাব রয়েছে ।
সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর শহরের শ্রীমঙ্গল রোডের দর্জিমহলে প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর বাড়িতে মৌলভীবাজার সদর উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের এক যৌথ বর্ধিত সভায় মহসিন স্ত্রী সৈয়দা সায়েরা মহসিনকে স্থানীয়ভাবে সমর্থন জানানো হয়। কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা জেলা পরিষদের প্রশাসক সাবেক হুইপ আজিজুর রহমান, জেলা সভাপতি ও সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ এমপি এবং সাধারণ সম্পাদক নেছার আহমদসহ তাদের কর্মী-সমর্থকদের আমন্ত্রণ না জানানোর কারণে তারা ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন না।
এই ৩ জনের মধ্যে সাবেক হুইপ আজিজুর রহমান ও জেলা সম্পাদক নেছার আহমদ প্রার্থী হওয়ার দৌঁড়ে রয়েছেন।
আবার সৈয়দ মহসিন আলীর বলয়ের নেতা পুলিশের সাবেক এআইজি সৈয়দ বজলুল করিম বিপিএম, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত পুরকায়স্থ ও প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মালিক তরফদার শোয়েব গণমাধ্যমে নিজেদের প্রার্থীতার ঘোষণা করেছেন। সম্প্রতি নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে সাবেক ছাত্রনেতা ভিপি শোয়েব নিজেকে সৈয়দ মহসিন আলীর অনুসারি দাবি করে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেন।
অপরদিকে নন রেসিডেন্স কমার্শিয়াল (এনআরবি) ব্যাংকের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার ফরাসত আলী, রাজনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিসবাহুদ্দোজা ভেলাইর সমর্থকরা এবার রাজনগর থেকে প্রার্থী দেওয়ার দাবি জানিয়ে পৃথক শোডাউন করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও পোস্টারিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা এম এ রহিম শহীদ, মৌলভীবাজার চেম্বারের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেনের সমর্থকরা জোরশোরে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের এই দীর্ঘ প্রার্থী তালিকা আরও দীর্ঘ করতে চাচ্ছে জাতীয় পার্টি। মহাজোটের শরিক এই দল আসনটি চাইতে পারে এমন আভাস দিলেন দলের জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট এম মাহবুবুল আলম শামীম ।
তিনি বলেন, আমরা মহাজোটের শরিক দল। এই জেলায় আমাদের কোনো এমপি নেই। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে একটি আসনে আমাদের ছাড় দিলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় আমরা বিজয়ী হতে পারিনি। এখন এই আসনটি আমরা চাইব।
মহাজোটের শরিক জাসদ (ইনু) জেলা সভাপতি আবদুল হক বলেন, আমাদের দৃষ্টি এখন ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের দিকে। সেই নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে এখানে উপনির্বাচনে পেশাদার রাজনৈতিক কোনো প্রার্থী দেওয়া প্রয়োজন। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকেই ভাবতে হবে।
আওয়ামী লীগের দীর্ঘ প্রার্থী তালিকা নিয়ে জেলা সভাপতি উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ এমপি বলেন, গঠনতন্ত্র ও জোটের ঘোষণাপত্র অনুযায়ী দলের পার্লামেন্টারি বোর্ড উপনির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা বোর্ডের সভাপতি হিসেবে এই সভায় সভাপতিত্ব করবেন। তিনি দেশ, দল ও জোটের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেবেন, এখানে আবেগের কোনো স্থান নেই। এছাড়া সময় সময় কেন্দ্র যে নির্দেশনা দেবে সেটা পালন করা আমাদের দায়িত্ব।
তবে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সৈয়দা সায়রা মহসিনকে সমর্থনের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।
উল্লেখ্য, গত ১৪ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মহসিন আলী মারা যাওয়ায় এ আসনটি শূণ্য হয়।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, এ উপনির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় ১১ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১৪ নভেম্বর, প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ নভেম্বর, ভোট গ্রহণ ৮ডিসেম্বর।